অদ্ভুত বিষয়বস্তুর জন্য ‘ইন্টারনেট সার্চ’ আপনার ব্যক্তিগত কম্পিউটার এর জন্যই বরাদ্দ রাখুন।
সত্যি বলছি, আপনি নিশ্চয়ই আপনার কর্মক্ষেত্রে বিতর্কিত হতে চান না, তার মতো, যিনি অফিসের কর্মব্যস্ত সময়ে বা মিটিংয়ে গুগলিং করার জন্য ধরা খেয়েছেন।
যখন আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রের কম্পিউটারটি ব্যবহার করেন তখন অন্যান্য কর্মকর্তারা আপনাকে অনুসরণ করতে পারে যে, আপনি আপনার কম্পিউটারে কি করছেন?
‘যদি কোনো ব্যক্তিগত ডাটা বা ব্যক্তিগত কাজ যা কম্পিউটার থেকে করা হয়েছে, তা কর্মকর্তা দ্বারা সংগৃহীত হতে পারে’ বলেছেন ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু উইটম্যান। তাই সচেতন থাকতে হবে প্রতিটি ক্লিক, সার্চ, ইমেইল, ব্যক্তিগত কাজ, শপিং, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওয়েবসাইট ভিজিটে।
অনেক সময় সার্চ হিস্ট্রি মুছে ফেললেও আপনি রক্ষা নাও পেতে পারেন।
‘কখনোই মনে করবেন না যে, কর্মক্ষেত্রে ইন্টারনেট এ কাটানো সময় গোপন করতে সার্চ হিস্ট্রি মুছে ফেলাই যথেষ্ট।’- আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বক্তা এবং ‘দ্য হিউমার অ্যাডভান্টেজ’ এর লেখক মিশেল কের এই উপদেশটিই প্রদান করেন।
বেশির ভাগ অফিসের আইটি ডিপার্টমেন্ট কম্পিউটার ব্যবহার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করেন এবং খুবই সচেতন থাকেন সন্দেহজনক গণ্য হতে পারে এমন সার্চের বিষয়গুলোর ব্যাপারে। তাই অফিসে বেশকিছু বিষয় সার্চ থেকে বিরত থাকা উচিত।
পর্নোগ্রাফি অথবা অন্যান্য অসঙ্গত ওয়েবসাইট
এই কাজটি আপনার নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিবে। কিন্তু অনেক ব্যক্তিকেই এই কাজ থেকে নিরস্ত করা যায় না। কের বলেন, একটি রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে যে, গ্রেট ব্রিটেনে পার্লামেন্ট অফিস থেকে তিন লাখেরও বেশি পর্নোগ্রাফি সাইটে সার্চ হয়েছে। বাল্টিমর শহরে এক কর্মচারী বরখাস্ত হয়েছেন মোট কাজের ৩৯ ঘণ্টা পর্নো দেখার কারণে। এর মধ্যে একদিন কাজের সময়ে ৮ ঘণ্টার মধ্যে তিনি ৬ ঘণ্টা পর্নো দেখে সময় পার করেছেন।
আপনার ও যদি এই অভ্যাস থেকে থাকে এবং এখনো যদি অফিস থেকে বরখাস্ত না হোন, তাহলে খুব দ্রুতই আপনার ভাগ্যে তা ঘটতে যাচ্ছে। যা আপনার জন্য হবে বিব্রতকর।
আপনার কোম্পানির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
কের বলেন, ‘আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে প্রত্যেক বিষয়েরই একটি সীমা আছে। কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় তথ্য খুঁজতে কম্পিউটারে অনুসন্ধান চালাবেন না। আপনার অফিসের আইটি ডিপার্টমেন্ট তথ্যের নেটওয়ার্কে প্রবেশের চেষ্টার প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারে। এছাড়া নিজের ব্যক্তিগত তথ্যও সুরক্ষিত রাখুন।
ব্যক্তিগত ব্যবসার ওয়েবসাইট
আপনি যদি আরেকটি পার্শ্ব কাজ করার চেষ্টায় থাকেন, তাহলে তা আপনার চাকরিতে হেলাফেলা ভাব আনার জন্য যথেষ্ট।
একি সঙ্গে আপনি যদি দুটো চাকরি চালিয়ে যান বা চাকরির পাশাপাশি ব্যক্তিগত ব্যবসা পরিচালনা করেন তাহলে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ‘সাইট সার্চ’ করুন এবং অবশ্যই তা আপনার কাজের ফাঁকে যখন সুবিধা পাবেন।
কের বলেন, ‘বহুসংখ্যক কর্মচারী বরখাস্ত হয়েছেন শুধুমাত্র চাকরির সময় নিজের ব্যক্তিগত ব্যবসাতে সময় দিতে গিয়ে, তারা তাদের কর্মকর্তার কাছে ধরা খেয়েছেন। এবং আপনি যদি ইন্টারনেটে সবসময় বেশি মাত্রায় সক্রিয় থাকেন তাহলে আপনার কর্মকর্তারা যেকোনো সময় আপনাকে ‘লাল সিগন্যাল’ দেখাতে পারেন।
জব সাইট সার্চ বিশেষ করে প্রতিপক্ষ কোম্পানিগুলোতে
নতুন চাকরি খোঁজার জন্য আপনার কর্মক্ষেত্রের কম্পিউটারটি ব্যবহার না করাই উত্তম। এমনকি আপনার বর্তমান চাকরি নিয়ে যদি আপনার মনে অসন্তোষ কাজ করে তাও। কারণ এটি আপনার জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
রাইয়ান খান, একজন ক্যারিয়ার কোচ, দ্য হ্যারিড গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং ‘হ্যারিড! দ্য গাইড ফর দ্য রিসেন্ট গ্রাড’ এর লেখক বলেন, ‘আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রের কম্পিউটারে যা কিছু করেন না কেন তা আপনার কর্মকর্তার নজরদারিতে থাকে। এবং নতুন চাকরির খোঁজ করলেও আপনি অসুবিধায় পড়তে পারেন, এমনকি আপনার চাকরিও চলে যেতে পারে।’
কের বলেন, ‘যদি আপনি অতিমাত্রায় জব সাইটগুলোতে ঘোরাফেরার জন্য ধরা খান তবে আপনার অফিসের কর্মকর্তারা আপনাকে লাল সিগন্যাল দেখানোর জন্য অপেক্ষা করছেন।‘ তিনি আরো বলেন, ‘এবং আপনি যদি আপনার বর্তমান কোম্পানির প্রতিপক্ষ কোম্পানির জব সাইটে ঢোকার জন্য ধরা পরেন তাহলে আপনার জন্য বরাদ্দ ‘জ্বলন্ত লাল সিগন্যাল’। কেননা প্রতিপক্ষের কোম্পানিতে চাকরি খোঁজার বিষয়টি নিরাপত্তা, গোপনীয়তা ও চুক্তিকে বিঘ্নিত করে।
সম্পর্ক এবং ডেটিং সংক্রান্ত বিষয়
টিনা নিকোলাই, ‘রিসিউম রাইটার’স ইংক’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও ক্যারিয়ার এক্সপার্ট বলেন যে, ‘আপনার কর্মক্ষেত্রের কম্পিউটারে সার্চ হিস্ট্রিতে আপনার ব্যক্তিগত জীবন প্রকাশ না করাই শ্রেয়।’
এর মানে হল কর্মক্ষেত্রে অনলাইন ডেটিং সহ এ ধরনের ব্যক্তিগত কাজ থেকে বিরত থাকা ভালো।
পার্টি পরিকল্পনা, অবকাশ যাপনে ভ্রমণ, বিয়ে সংক্রান্ত ওয়েবসাইট
নিকোলাই বলেন, আপনার অফিসের কর্মকর্তা কখনোই চাইবেন না যে আপনি আপনার কাজের সময় আপনার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করবেন। তিনি বলেন, ‘বিয়ে, পার্টি কিংবা ছুটিতে আপনি কি করবেন সে পরিকল্পনা অফিসে করা বাদ দিন।’ এসব বিষয়ের সাইট ভিজিট বা সার্চ বাদ দিয়ে আপনি যদি কাজ সংক্রান্ত চিন্তা করেন তা আপনার জন্য সুফল বয়ে আনবে।
অত্যাধিক সার্চিং সম্ভবত সাধারণ ভাবেই ভালো নয়
শুধু এইটাই মনে রাখুন ওয়েব সার্চ করার জন্য আপনাকে বেতন দেয়া হয় না। কের বলেন, ‘কাজের সময়টা অযথা সার্চ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন।’ কিছু কর্মচারী আছেন তারা কাজের সময়ে একফাঁকে গতরাতের খেলার স্কোর বা খেলার খবর, শেয়ার বাজারে চোখ বুলিয়ে নেন। কিন্তু দিনের ভালো একটা অংশ যদি এসবে ব্যয় করায় অফিসের কর্মকর্তার কাছে ধরা খান তাহলে অচিরেই আপনি আপনাকে ‘হট সিটে’ দেখতে পাবেন।
তথ্যসূত্র : বিজনেস ইনসাইডার
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আব্দুল করিম
সম্পাদকীয় কার্যালয়: এস করিম ভবন, তৃতীয় তলা ৪৩, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট ঢাকা- ১২০৫
ফোন: 02 9356582, মোবাইল: 01715635623, ইমেইল: [email protected]