বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘‘সংস্কারের উদ্দেশ্য বলতে সেটিই বুঝি, যে সংস্কারের মাধ্যমে সংবিধানের কয়েকটি বাক্য নয়, বরং মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। অর্থাৎ একজন মানুষের রোজগারের ব্যবস্থা হবে, তার ও পরিবারের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা ও সঞ্চয় নিশ্চিত হবে।’’
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা: ৩১ দফার আলোকে সংস্কার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত গণতন্ত্রের পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, সম্মানিত কূটনীতিকবৃন্দ, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ‘‘আজ আমরা যারা এখানে উপস্থিত রয়েছি, আমাদের রাজনৈতিক দর্শনে ভিন্নতা আছে; সেটিই স্বাভাবিক। তবে আমি বিশ্বাস করি, ভিন্ন-ভিন্ন রাজনৈতিক ধারার মাঝেও, বৃহত্তর পরিসরে আমাদের সবার মাঝে একটি বিষয়ে আদর্শিক ঐকমত্য রয়েছে। আর সেই বিষয়টি হলো, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা।’’
আমরা সবাই এমন দেশ গড়তে চাই, যেখানে আর কখনো ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না। আমরা সবাই একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ চাই, যেখানে জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা কেউ কেড়ে নেবে না। আমরা সবাই একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত বাংলাদেশ চাই, যেখানে গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে, নির্বাচিত ও জবাবদিহিমূলক সরকার নিশ্চিত করবে জনগণের মালিকানা ও অংশীদারত্ব।’’
‘‘আমরা মনে করি, একটি দেশে নির্বাচিত সরকারের প্রথম কাজ হচ্ছে রাষ্ট্রকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালনা করা, যেন রুলস-বেসড অর্ডার ঠিক থাকে। রাষ্ট্রে যদি আইনের অনুশাসন থাকে, জবাবদিহিতা ও সুশাসন থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন হবে। আওয়ামী লীগের মতো পরিবারতন্ত্র ও অলিগার্ক শ্রেণি তৈরি হবে না; বিভাজন ও বৈষম্য থাকবে না; সমাজের প্রতিটি স্তরে দলীয়করণ ও প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয় ঘটবে না।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা যদি একটি রুলস-বেসড রাষ্ট্র কাঠামো নিয়ে আসতে পারি, সারা পৃথিবী থেকে প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট ও প্রাইভেট ক্যাপিটাল নিজ গতিতেই বাংলাদেশে আসবে। আমাদের পাবলিক সেক্টরের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে; দেশের উন্নয়ন ও উৎপাদনে ভূমিকা রাখবে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, আগামীর বাংলাদেশে আর কোনো ব্যক্তি, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও, স্বেচ্ছাচারী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারবে না। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারের প্রতিটি লেভেলে নিশ্চিত করা হবে, কেউ জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে না, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না।’’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে, আমরা দল-মত নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে চাই। ঠিক যেভাবে আজ থেকে দুই দশক আগে, বিএনপি সরকারের সময়, বাংলাদেশে মিডিয়া নির্ভয়ে সরকারের সমালোচনা করতে পারতো, কার্টুন আঁকতে পারতো। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আমাকে নিয়ে এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে, মিডিয়ার একাংশ ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করেছিল; মিডিয়া ট্রায়াল ও প্রোপাগাণ্ডা ক্যাম্পেইন করেছিল। কিন্তু আমরা তার প্রতিদানে কোনো মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করিনি, কাউকে হেনস্থা করিনি, কোনো সম্পাদককে জেলে পাঠাইনি।
‘‘গত ১৬ বছরে আমার নিজের, আমার দলের এবং গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি তথা আপনাদের অনেকের ফ্রিডম অফ স্পিচ, ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন এবং ফ্রিডম অফ এসোসিয়েশন সম্পূর্ণভাবে হরণ করা হয়েছে। সেই উপলব্ধিকে ধারণ করে, আমরা সকল নাগরিক, বিশেষত মানবাধিকারকর্মী, সংবাদকর্মী, ও সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবো, ইনশাআল্লাহ।
‘‘আমাদের লক্ষ্য এমন একটি রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলা, যেখানে ইউটিউব, ফেসবুক, ও অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিজেদের ভাবনা প্রকাশের কারণে, কিংবা প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিষয়ে মন্তব্যের দায়ে, কাউকে হেনস্থা করা হবে না। সত্য গোপন করতে মেইনস্ট্রিম ও সোশ্যাল মিডিয়া যেমন বাধ্য থাকবে না, তেমনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে সেটির প্রচারেও সরকার কাউকে চাপ দেবে না। তবে দেশ গঠনের দায়িত্ব সবার, এবং আমরা মিডিয়ার কাছ থেকে নিরপেক্ষ এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করি।’’
তিনি বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা ও বিচার, পরোয়ানা ছাড়াই গণগ্রেপ্তার এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে যে ভয়ের সংস্কৃতি গত ১৬ বছরে গড়ে উঠেছিল, জনগণের ভোটে নির্বাচিত বিএনপি সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে সেটি নির্মূল করার জন্য। জাতিসংঘ প্রণীত মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র অনুসারে আমরা নিশ্চিতের চেষ্টা করবো প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা।
তারেক রহমান বলেন, ক্ষমতার পরিবর্তন মানে কেবল একটি দল থেকে অন্য দলের কাছে রাষ্ট্রের ক্ষমতা হস্তান্তর নয়। বরং, ক্ষমতার পালাবদলে এমন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা হওয়া উচিত, যেখানে সমাজের পরিবর্তিত অবস্থা ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যায়।
‘‘ফ্যাসিবাদের পতনের পর গত ৩ মাসে, বিএনপির জাতীয় নেতৃবৃন্দ এমন অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যাতে রাজনীতিতে আধুনিকায়নের উন্মেষ ঘটে। সেই সব উদ্যোগকে, তারুণ্যের উদ্দীপনায়, দেশজুড়ে প্রতিপালন করেছে বিএনপির তৃণমূল। ফলে আপনারা দেখেছেন, অতীতের মতোই কীভাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা বন্যার সময় সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শক্তি ও সাহায্য নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে; গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত পরিবারগুলোকে আন্তরিক সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করছে; জনদুর্ভোগ এড়াতে মোটরসাইকেল বহর বা শোভাযাত্রা থেকে নিজেদের বিরত রাখছে; রাজনৈতিক প্রোগ্রাম শেষে অত্র স্থান পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন করছে; নগরের দেয়াল থেকে ব্যানার ও পোস্টার অপসারণ করছে; ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করছে জনসম্পৃক্ত ও সমাজবান্ধব রাজনীতিকে।
‘‘আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সীমাহীন খুন, হামলা, ধর্ষণ, ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়লেও, দলীয়ভাবে তাদের শাস্তি দেওয়ার কোনো ইতিহাস নেই। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী থেকে দেখা যায়, দেড় হাজারেরও অধিক গণতন্ত্রকামী মানুষকে গণঅভ্যুত্থানে হত্যা করার পরেও, আওয়ামী লীগের কোনো নেতার কোনো অনুতাপ, অনুশোচনা বা আত্মসমালোচনার নজির নেই।
‘‘অপরদিকে আমরা সবাই জানি যে, বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রয়েছে। তারপরও, এত বিশাল সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কেউ বিচ্ছিন্নভাবে কোনো অপরাধে জড়িত হলে, তা জানামাত্রই আমরা দ্রুত সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিয়েছি। ৫ আগস্টের পরে, দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছিল, পুলিশের অনুপস্থিতি ছিল। সেই সময়ে দলীয়ভাবে বিএনপি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে; দেশকে আগলে রেখেছে; নিশ্চিত করেছে জননিরাপত্তা ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা। প্রতিহিংসার রাজনীতিতে না জড়িয়ে সহিংসতাকে প্রতিহত করেছে এবং সহাবস্থান নিশ্চিত করেছে।’’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র ঠেকাতে পূজার সময়, বিএনপির নেতাকর্মীরা মন্দির ও উপাসনালয় পাহারা দিয়ে হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধসহ সকল মানুষের সুরক্ষায় পাশে দাঁড়িয়েছে। ধর্ম-বর্ণ, কিংবা ভৌগোলিক-আদর্শিক অবস্থান নির্বিশেষে, প্রত্যেক নাগরিক যেন তার ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অধিকার বিনা বাধায় উপভোগ করতে পারে, সেই লক্ষ্যেই মুক্তিযোদ্ধারা লাখো প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন।’’
‘‘তাই স্বাধীন বাংলাদেশেও তথাকথিত সংখ্যালঘু হিসেবে আমরা কাউকে বিবেচনা করি না। প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই বিএনপির নীতি। এই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শই বিএনপির রাজনীতি। আমরা বিশ্বাস করি- ধর্ম, দল ও মত যার যার; তবে রাষ্ট্র সবার।
‘‘আজ আমরা ৩১ দফার যে আলোচনা এখানে করেছি; তা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে; আকাঙ্ক্ষার আলো দেখাবে পরিবর্তনকামী গণমানুষকে। রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের এই রূপরেখা তৈরি হয়েছে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০, বিএনপির জনসম্পৃক্ততা ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে প্রথমে প্রদত্ত ২৭ দফার ওপর ভিত্তি করে, যা পরবর্তীতে যুগপৎ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শরিক সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে ৩১ দফায় পরিণত হয়।
‘‘বর্তমানে দেশে আলোচিত প্রায় সব সংস্কার প্রস্তাবই আমাদের ৩১ দফায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আমি সংস্কারের উদ্দেশ্য বলতে সেটিই বুঝি, যে সংস্কারের মাধ্যমে সংবিধানের কয়েকটি বাক্য নয়, বরং মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে; অর্থাৎ একজন মানুষের রোজগারের ব্যবস্থা হবে, তার ও পরিবারের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা ও সঞ্চয় নিশ্চিত হবে। আমি সংস্কার বলতে সেটিই বুঝি, যা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে প্রতিটি নারী ও পুরুষের বেকারত্ব সমস্যার সমাধান করবে। যে সংস্কার নারীদের সম্মান, স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করবে।
‘‘যে সংস্কার সকল মানুষের জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। যে সংস্কার দেশের সন্তানদের আধুনিক শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ গঠন করবে। যে সংস্কার মানুষকে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা দেবে। যে সংস্কার বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম স্থিতিশীল রাখবে। আমি সংস্কার বলতে সেটিই বুঝি, যা কৃষক, শ্রমিক এবং সকল কর্মজীবী মানুষের ন্যায্য ও প্রাপ্য মজুরি নিশ্চিত করবে।’’
তারেক রহমান তার বক্তব্যে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে স্বৈরাচারী ব্যবস্থার যেন রিপিট না ঘটে, সেটি নিশ্চিত করতে বিএনপি সংবিধানে এমন ব্যবস্থা রাখতে চায়, যাতে কেউ পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন। আমরা আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখতে চাই। রাষ্ট্র পরিচালনায় সমাজের জ্ঞানী-গুণীদের প্রতিনিধিত্ব এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে চাই।’’
‘‘আমাদের লক্ষ্য তরুণ ও বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান, আর কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত যোগ্যতা অনুযায়ী বেকার ভাতা প্রবর্তন। আমরা নিশ্চিত করতে চাই সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ, তৃণমূলের ক্ষমতায়ন এবং আবারো ঐতিহাসিক খাল কাটা কর্মসূচির বাস্তবায়ন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, জ্বালানি, জলবায়ু, অর্থনীতি– সব ক্ষেত্রে আনতে চাই যুগোপযোগী আমূল পরিবর্তন। যেন তৈরি হয় দক্ষ মানবসম্পদ; বৃদ্ধি পায় রপ্তানিমুখী শিল্প ও প্রবাসীদের রেমিট্যান্স; স্থাপিত হয় মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা।
‘‘ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, কৃষক ও উৎপাদনকারীদের জন্য ন্যায্যমূল্য, চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা ও বহুভাষার প্রশিক্ষণ, বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা, এবং সবার জন্য পর্যায়ক্রমিক আবাসন সুবিধা ও সামাজিক সুরক্ষা- এই পরিকল্পনাগুলো ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-গোষ্ঠী-সমতল-পাহাড়ি নির্বিশেষে সুষম ও সমঅধিকারের আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণে একটি ঐকমত্যের ভিশন বলেই আমি মনে করি।
‘পরিবেশ, পরিস্থিতি, দেশের প্রয়োজন এবং মানুষের চাহিদার সাথে মানিয়ে নিতে ৩১ দফাকে সংযোজন, বিয়োজন, পুনর্বিন্যাস বা পরিবর্তনও করা যেতে পারে। তবে তা হবে স্টেকহোল্ডার কন্সালটেশন তথা অংশীজন পরামর্শ ও জনমত ঐক্যের মাধ্যমে। সময়ের সাথে এই ৩১ দফাই একদিন আমাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য তথা সুখী ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ অর্জনের দ্বার উন্মোচন করবে; যা বিশ্ব মানচিত্রে পরিচিত হবে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ, শিল্পায়নে সাফল্যমণ্ডিত, অর্থনীতিতে গতিশীল, মানবসম্পদে সমৃদ্ধ এবং সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধ একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে।’’
বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে তারেক রহমান বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য কেবল ক্ষমতায়ন নয়। বরং, রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন এবং জনগণের অভিপ্রায়ের বহিঃপ্রকাশও এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আজকে আমরা যারা এখানে সমবেত হয়েছি, দেশে-বিদেশে আমরা যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে সবসময় ভাবি; আমাদের গড়ে তুলতে হবে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, উদার ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। আমাদের সবাইকে এক হয়ে এগিয়ে যেতে হবে বহু দূরে। এই অগ্রযাত্রার গতি হতে হবে দ্রুত তবে স্থির; লক্ষ্য হতে হবে সুনির্দিষ্ট।’’
‘‘জাতীয় ঐতিহ্য ও অতীতের ভালো অর্জনগুলোকে ধারণ করে; আমাদের চেতনা এবং দায়বদ্ধতাকে হতে হবে ভবিষ্যতমুখী। গতানুগতিক ধারার রাষ্ট্র পরিচালনায় আবদ্ধ থাকলে চলবে না। আমাদের উৎসাহ দিতে হবে আধুনিকতাকে; বরণ করে নিতে হবে অভিনবত্বকে। সামনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আলিঙ্গন করে নিতে হবে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের চিন্তাধারাকে, যা পরবর্তীতে পরিবর্তন করে রাজনৈতিক সংস্কৃতিকেও।
‘‘পরিশেষে আমি বলতে চাই, গত ১৬ বছর ধরে এবং জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন, গণতন্ত্রের পক্ষের প্রতিটি ব্যক্তি, দল, সংগঠন ও গোষ্ঠী তাদের সকলের আত্মত্যাগের যথাযথ স্বীকৃতি দিয়ে; প্রতিটি শ্রেণী-পেশা-মতের মানুষের অংশগ্রহণকে সম্মান জানিয়ে, লুণ্ঠিত ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনে এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের সমন্বিত অগ্রাধিকার।’’
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে শামা ওবায়েদ ও ফারজানা শারমিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জামায়াতে ইসলামীর রফিকুল ইসলাম খান, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, এবি পার্টির আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান ও অ্যাডভোকেটে এলিনা খান বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) আন্দালিব রহমান পার্থ, জামায়াতের হামিদুর রহমান আজাদ, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ এর নুরুল আমিন বেপারি, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, জাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমান, রাশেদ প্রধান, এনডিপির আবু তাহের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের হারুন চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের আশরাফ আলী আকন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জ্যেষ্ঠ নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আফরোজা খান রীতা, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জহির উদ্দিন স্বপন, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, মাহবুবে রহমান শামীমসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, পাকিস্তান, ভারত, জাপান, সৌদি আরব, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক নুরুল আমিন, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিমসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিসক, আইনজীবী ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আব্দুল করিম
সম্পাদকীয় কার্যালয়: এস করিম ভবন, তৃতীয় তলা ৪৩, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট ঢাকা- ১২০৫
ফোন: 02 9356582, মোবাইল: 01715635623, ইমেইল: [email protected]