নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী জসিমউদ্দিন মাসুমকে তার প্রেমিকা ‘ক্ষোভের বশে পরিকল্পিতভাবে খুন করে’ লাশ সাত টুকরো করে পূর্বাচলের লেকে ফেলে দেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন।
এর আগে দুপুরে ঢাকার শেওড়াপাড়া থেকে রুমা আক্তার নামে ২৮ বছর বয়সী এক নারীকে জসিম হত্যাকাণ্ডে ‘প্রধান সন্দেহভাজন’ হিসেবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এসপি প্রত্যুষ কুমার মজুমদার জানান, গত ১০ নভেম্বর রাতে শেওড়াপাড়ার ফ্ল্যাটেই জসিমকে খুন করেন রুমা। পরে তার মরদেহ টুকরো করে পলিথিন ব্যাগে ভরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলের একটি লেকে ফেলে দেন।
গ্রেপ্তার রুমা ময়মনসিংহের গৌরিপুর থানার তারাকান্দা গ্রামের নজর আলীর মেয়ে। অবিবাহিত এই নারী শেওড়াপাড়ার ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
৫৯ বছর বয়সী জসিমউদ্দিন মাসুমের পৈত্রিক বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার সস্তাপুর এলাকায়। সেরা করদাতার পুরস্কার পাওয়া এ ব্যবসায়ী পরিবারের সাথে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকতেন। তার পরিবারে স্ত্রী, দুই ছেলে এবং এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
নিহতের ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম সিহাব জানান, তার বাবা গত ১০ নভেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি। পরে ১১ নভেম্বর তার নিখোঁজের বিষয়ে গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
সিহাব আরও বলেন, ‘পরে কোথাও তার খোঁজ না পেয়ে আমরা থানায় জিডি করি। গতকাল (বুধবার) বাবার টুকরো লাশের খবর পেয়ে আমার মাথায় আসমান ভেঙে পড়ে।’
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ‘পরকীয়া প্রেমিকা’ ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও হেসকো ব্লেডও উদ্ধার করা হয়েছে।
‘গ্রেপ্তার রুমার সাথে নিহত ব্যবসায়ী জসিমউদ্দিনের পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। ওই নারীর ফ্ল্যাটে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তাকে বিয়ে করবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছিলেন জসিম। কিন্তু বিয়ে নিয়ে বিলম্ব করায় ক্ষুব্ধ ছিলেন রুমা। এরমধ্যে অপর এক নারীর সাথেও জসিমের সম্পর্ক আছে জানতে পেয়ে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে তাকে খুন করার পরিকল্পনা করেন রুমা।”
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১০ নভেম্বর রাতে রুমা জসিমউদ্দিনকে নিজের ফ্ল্যাটে ডেকে নেন। সেখানে তাকে ড্রিংকস-এর সাথে চেতনানাশক মিশিয়ে খাওয়ান। অচেতন অবস্থায় ধারালো চাপাতি চালিয়ে জসিমকে হত্যা করেন তিনি। পরে তার মরদেহের টুকরো করে পলিথিন ব্যাগে ভরে তা পূর্বাচলের লেকে ফেলে আসেন।’
এসপি বলেন, ‘পুরো কাজটি তিনি (রুমা) একাই করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। লাশের টুকরোগুলো লেকে ফেলার জন্য পরিবহন হিসেবে সিএনজি ও উবার ব্যবহার করেন। একাধিক দফায় লাশগুলো নিয়ে লেকে ফেলেন তিনি।’
রুমাকে শেওড়াপাড়ার ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার করা হলেও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি, হেসকো ব্লেড বনানীর আরেকটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের পরনের সাফারি (স্যুট) ও এক জোড়া জুতাও পাওয়া গেছে বলে জানান এসপি।
তাছাড়া, গ্রেপ্তার আসামির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পূর্বাচল থেকে নিহতের শরীরের আরও কিছু অংশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় ওই নারীকে অন্য কেউ সহযোগিতা করেছিলেন কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান প্রত্যুষ কুমার।
তবে পুলিশের এসব তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে নিহতের ছেলে সিহাব বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনোকিছু আমাদের জানা নেই।’ তিনি তার পিতার হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
এদিকে, খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের পর গতকাল বুধবার রাতে রূপগঞ্জ থানায় এই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। নিহতের পরিচয় পাওয়ার আগে পুলিশ বাদী হয়ে করা ওই মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছিল। ওই মামলায় রুমাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আব্দুল করিম
সম্পাদকীয় কার্যালয়: এস করিম ভবন, তৃতীয় তলা ৪৩, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট ঢাকা- ১২০৫
ফোন: 02 9356582, মোবাইল: 01715635623, ইমেইল: [email protected]