বাজান।
বল, শুনতেছি।
আমারে আইজ বাজারে মজা খাওয়াইতে হইবো।
কি খাবি?
তুমি তো জানো ই।
রসগোল্লা।
হুম।
বাজার করার পর টেকা থাকলে তোরে রসগোল্লা খাওয়ামু নে।
বাজারের সব কেনাকাটা শেষ হবার পর।
রতন।
জ্বি আব্বা!
রসগোল্লার টেকা তো হইব না।
থাক বাজান। রসগোল্লা খাওয়া লাগবো না।
মন খারাপ করছস বাজান?
না।
বাতাসা কিন্না লই। বাড়িতে গিয়া তোমার টুনি আর পারু বুবুরে নিয়া খাইয়ো।
আচ্ছা বাজান।
সব কাজ শেষে রিকশায় চড়ে বাপ আর ছেলে বাড়ি ফিরছে। তখন রতন দেখলো একজন ফেরিওয়ালার হাতে নানা রঙের ঘুড়ি।
তখনই রতন বাবা কে বলল “বাজান, ঐ দেখেন, কত সুন্দর সুন্দর ঘুড্ডি।আমারে একটা লাল ঘুড্ডি কিননা দিবেন!
ঐ ভাই। আপনার ঘুড্ডি কত টাকা?
কয়টা নিবেন?
একটা। কত
পাঁচ টাকা।
বাবা পকেটে হাত দিয়ে দুই টাকার দুইটা নোট বের করে হকার কে দিয়ে বলল, আমার কাছে এই চার টেকা ই আছে। ঐ লাল ঘুড়ি টা দিয়ে দেন।
পারুম না।
এক টাকাই তো কম। দিয়া দেন ভাই। আমার পোলাডা শখ করছে?
ঐ এক টাকাই আমার লাভ। চার টেকা কইরা ঘুড্ডি কিননা আনছি।
থাক বাজান। আমার ঘুড্ডি লাগবো না।
বাড়ি ফেরার পর রতন মন টা খারাপ করে ঘরের এক কোণে বসে রইল। তার চোখে এখনো ভাসছে, সেই লাল ঘুড়ি টা।
সবার সব ইচ্ছে পূরণ হয় না। আমার ও হবে না। মনে মনে ভাবলো রতন।
দুই বোন তাকে গম্ভীর দেখে বলল, কিরে মন খারাপ কেন? বাতাসা আরো খাবি৷ নে খা।
না। খামু না।
কেন? কি হইছে তোর। শরীর খারাপ।
তখনই ঘরে ঢুকতে ঢুকতে তাদের বাবা বলল, ওর একটা লাল ঘুড্ডি পছন্দ হয়েছিল, কিন্তু কিনতে পারলাম না। একটেকা কম ছিল।
এবার রতন মন টা আরও খারাপ করে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
একটা খোলা মাঠ। অনেক ছেলেমেয়েরা একসাথে ঘুড়ি, খুব সুন্দর একটা দৃশ্য। এমন সময় নিজের হাতে একটা ঘুড়ি থাকলে নিজেও উড়াতে পারতো ঘুড়ি। কিন্তু তার কোন ঘুড়ি নেই। মন খারাপ করে ও মাঠের কোণে পুকুর পাড়ে বসে আছে।
হঠাৎ করে কেউ একজন এসে রতন কে ধাক্কা দিয়ে পুকুরে ফেলে দিলো।
আচমকা ঘুম ভাঙলো রতনের। চোখ মেলে দেখলো টুনি আর পারু বুবু তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
তোমরা হাসো কেন?
এমন ভর দুপুরে কেউ এভাবে ঘুমায়।
আমি ঘুমাই।
দেখতো কেমন হইছে?
রতন তো পুরো ই অবাক হয়ে গেল বুবুর হাতে লাল ঘুড়ি টা দেখে।
ছোট্ট রতন ঘুড়ি টা পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেললো।
পারুল রতন কে জড়িয়ে ধরে তার কপালে চুমু দিয়ে বলল, তোর ঘুড্ডি লাগবো, বুবুরে কইলেই তো পারতি, কাইন্দা বিছানা ভাসাইলে হইব!
রতন অবাক হয়ে বলল, ঘুড্ডি কই পাইছো বুুবু?
কই আর পামু, ঘরে লাল কাগজ ছিল। আর বাকি সবকিছু জোগাড় করে দুই বোন মিলে তোর জন্য ঘুড্ডি বানাইছি।
বুবু একটা কথা কই?
বল।
তোমরা এতো ভালা কেন?
ওরে পাকনা ভাই আমার। তুই যে আমাদের আদরের ছোট ভাই। বুকের ভেতর জমানো সবটুকু ভালোবাসা তো তোর জন্য।
(সমাপ্ত)
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আব্দুল করিম
সম্পাদকীয় কার্যালয়: এস করিম ভবন, তৃতীয় তলা ৪৩, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট ঢাকা- ১২০৫
ফোন: 02 9356582, মোবাইল: 01715635623, ইমেইল: [email protected]