ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের কিছু অংশ জব্দ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বাংলাদেশি মুদ্রার হিসাবে যার পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। আইনি মীমাংসা হলেই এই অর্থ ফেরত আসতে পারে দেশে। এটি মূলত, মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ বা এমটিএফই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের অংশ। সিআইডি জানিয়েছে, অর্থ উদ্ধারে অনেক পক্ষের সহায়তা মিলছে। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে দেশে আলাদা আইন না থাকায় নতুন অপরাধ দমনে চ্যালেঞ্জ বাড়ছে।
দুই বছর আগে এমটিএফই’র জালিয়াতির শুরু করে। তখন বলা হয়েছিল, কিছু টাকা বিনিয়োগ করলেই হওয়া যাবে প্রতিষ্ঠানের সিইও। প্রতিদিন মিলবে দ্বিগুণ-তিন গুণ মুনাফা। এজন্য ট্রেডিং করতে হবে বিদেশি অ্যাপে। সে আশায় এখানে লাখ লাখ টাকা লগ্নি করেন কয়েক হাজার তরুণ।
কিন্তু, ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট হঠাৎ শূন্য হয়ে যায় অ্যাকাউন্ট। সাড়া মেলেনি ঐ ট্রেডিং অ্যাপ থেকেও। স্পষ্ট হয় দেশ থেকে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে এমটিএফই। যার বড় অংশই পাচার হয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে।
এজন্য বাইন্যান্সের মতো আন্তর্জাতিক এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম ওকেএক্স ব্যবহার করে চক্রটি। যেখানে বিনিয়োগের টাকা রূপান্তরিত করা যায় ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে। তখন থেকেই বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। ভুক্তভোগীদের তথ্য চেয়ে বিজ্ঞপ্তিও দেয় পুলিশের এই বিভাগটি। অবশেষে জানা গেলো, কিছু অর্থের হদিস মিলেছে।
সাইবার ক্রাইম বিভাগের তদন্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, আমরা ওকে এক্স প্লাটফর্মে চিঠি লিখেছি। এর মধ্যে প্রায় ৩.৭ মিলিয়ন ডলার জব্দ করতে পেরেছি। ৩০ দিন পর আবারও চিঠি দিবো। মূলত ১ মাস পর পর চিঠি দিতে হয়।
তিনি আরও জানান, ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন দেশে অবৈধ। নেই কোনো আলাদা আইন। তারপরও প্রায় ২ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন করছে। ফলে অনেকটা চোখের সামনে দিয়ে টাকা পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে অসাধু চক্র। এসব অপরাধগুলো এতটাই দ্রুত প্রসারণশীল, এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু অনেক দেশ ক্রিপ্টোকারেন্সি বৈধ করে দিয়েছে, সামনে একই পথে হাঁটতে হবে বাংলাদেশকে। এতে বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে অর্থপাচার ঠেকাতে আইনের বিকল্প নেই।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল কারেন্সি, এটা আজকের যুগের বাস্তবতা। এটাকে কোনো অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এটা অনেক দেশে বৈধ করেছে আবার অনেক দেশে করেনি। অনেক দেশ এটা নিয়ে ভাবছে এটা কীভাবে বৈধতা দিবে। আমাদের দেশে একসময় এটা বৈধতা না দিয়ে পারবো না। তবে অর্থনীতির কিছু নীতিমালা মেনে চলতে হবে। সেই জিনিসগুলো যদি মেনে করা হয় তাহলে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই তবে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের আরও ৩০টি দেশ থেকে টাকা পাচারের অভিযোগ আছে এমটিএফই’র বিরুদ্ধে।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আব্দুল করিম
সম্পাদকীয় কার্যালয়: এস করিম ভবন, তৃতীয় তলা ৪৩, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট ঢাকা- ১২০৫
ফোন: 02 9356582, মোবাইল: 01715635623, ইমেইল: [email protected]