রাকিবুল ইসলাম রাজন : (বরগুনা প্রতিনিধি): ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বরগুনা পৌর শহরের বর্জ্য শোধনাগার। শুধুমাত্র অবকাঠামো নির্মাণ কাজের শেষ করা হয়েছে তবে লোকবল ও কারিগরী লোকে ব্যবস্থা না করে
২০২১ সালে বর্জ্য শোধনাগার চালু করা হয়। উদ্বোধনের তিন বছর পার হলেও চালু হয়নি ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বর্জ্য শোধনাগার।
বরগুনা শহরে প্রতিদিন ১০-১২ টন বর্জ্য পৌরসভা সংগ্রহ করে থাকে। তবে সেই বর্জ্য এখন পৌর শহরের সোনাখালীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রতিদিন বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। তবে বিষাক্ত এ বর্জ্য দূষিত করছে আশপাশের পরিবেশ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বরগুনা পৌরসভার সোনাখালীর ভাগাড়ের ৫০ গজের কম দূরত্বে রয়েছে ১০-১৫টি পরিবার। মশা মাছির উপদ্রবের পাশাপাশি ময়লা পোড়ানো ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে ভুগছেন শিশু-বৃদ্ধসহ পরিবারগুলোর সবাই। পৌর শহরের সব ময়লা ফেলা হয় সোনাখালীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। প্রতিরাতে ময়লার এ ভাগাড়ে আগুন জালিয়ে দেয় পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। সেই আগুন জ্বলতে থাকে দিনভর। ময়লা-আবর্জনা ও পলিথিনসহ প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়া কালো ধোঁয়া ও দুর্গন্ধে দুর্বিষহ দিন কাটছে এখানকাবাসীর।
জানা গেছে, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় বরগুনা সদর ইউনিয়নের হেলিবুনিয়া গ্রামে বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করা হয়েছে । বরগুনা পৌর শহরের সব বর্জ্য নির্মিত বর্জ্য শোধনাগারে না নিয়ে সোনাখালী এলাকায় খোলা স্থানে ফেলে রাখে পৌর কর্তৃপক্ষ। আবাসিক এলাকা, গ্রাম ও জনবসতিপূর্ণ স্থানে পৌরসভার ময়লার ভাগাড় করার কোনো বিধান না থাকলেও কর্তৃপক্ষ ইচ্ছেমাফিক এটা করেছেন। এই বর্জ্যের দুর্গন্ধে এই এলাকায় বসবাস করা এখন অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দিন রাত ২৪ ঘণ্টা এই দুর্গন্ধের মধ্যেই থাকতে হয় এলাকাবাসীর। পৌর শহরের বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করা হয়েছে ১৬ কোটি টাকা ব্যয় করে। কিন্তু সেটি দক্ষ ও অভিজ্ঞ এবং প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় ব্যবহার করছে না পৌর কর্তৃপক্ষ।
সোনাখালীতে অবস্থিত ময়লার ভাগাড় লাগোয়া বসতঘরের গৃহিণী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ২০ বছর ধরে তার বাসার সামনে ময়লা ফেলতে ফেলতে এখন বিশাল স্তূপে পরিনত হয়েছে। এখনো প্রতি রাতে ট্রাকে করে ময়লা ফেলা হয় এই স্তূপের ওপর। সেই ময়লা ভোর পর্যন্ত উপচে রাস্তার চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তখন আবার বেড়ে যায় দুর্গন্ধের মাত্রা। সকাল থেকে দুপুর পুরো সময় জুড়েই নাক ঢেকে চলাচল করতে হয় স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতগামী পৌরবাসীকে।
তিনি আরো জানান, পুরো শহরের ময়লা ফেলানোর পরে এখানে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্যে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এসময় শ্বাস নেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হয়। একদিকে ময়লার দুর্গন্ধ অন্যদিকে প্লাস্টিক আর পলিথিন পোড়া গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে।
পৌরসভাগামী আশেপাশের এলাকার মানুষ ছাড়াও স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার হাজারো শিক্ষার্থী প্রতিদিন এই পথে যাতায়াত করে।
এই পথ দিয়ে চলাচল করা স্কুল শিক্ষার্থী সিফাত জানায়, শহরে বের হলেই দেখা মিলে যত্রতত্র ময়লার ভাগাড়। নাকে ভেসে আসে দুর্গন্ধ। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। প্রতিদিন এই পথ ধরে স্কুলে আসা যাওয়া করতে হয় আমাদের। ময়লার দুর্গন্ধ আর প্লাস্টিক পোড়া গন্ধে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মো.মেহেদী পারভেজ বলছেন, হাসপাতালের বর্জ্য ও সাধারণ বর্জ্যের সংমিশ্রনে হুমকিতে পড়েছে জনজীবন। বাতাস দুষিত করে এমন কি জলকে দুষিত করে এবং মশা-মাছির মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থ খাবারকে দুষিত করে এবং রোগ জীবাণু ছড়ায়। এতে শিশু ও বৃদ্ধারা অসুস্থ হয় বেশি।
বরগুনা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। তিন বছর আগে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর শহরের বাইরে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে। শিগগিরই দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ দিয়ে হেউলিবুনিয়া এলাকার জনশূন্য এলাকায় নির্মিত শোধনাগারটি চালু করা হবে।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডাক্তার প্রদীপ চন্দ্র মন্ডল বলেন, অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। খোলা স্থান তো ময়লার ভাগাড় হতে পারে না। খোলা স্থানে হাসপাতালের ও সাধারণ বর্জ্যের সংমিশ্রণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই খোলা স্থান থেকে ময়লা সরিয়ে নিয়ে হাসপাতাল বর্জ্য ও সাধারণ বর্জ্য আলাদাভাবে রিসাইক্লিং করতে হবে। দুধরনের বর্জ্য মিলে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়ে মানুষের শরীরে মারাত্মক রোগের সৃষ্টি হয়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।