সুরবালা সেদিন জানতো না, এটাই মাহফুজের সাথে তার শেষ দেখা।
সেদিন আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল।
মেঘাচ্ছন্ন আকাশের বুকে উড়ছিল কয়েকটি ঘুড়ি।
কলোনির ছেলেরা সুযোগ পেলেই এখানে এসে খেলাধুলা করে, ঘুড়ি ওড়ায়, কেউ কেউ একাকী বসে বসে উপভোগ করেন ব্যস্ত শহরের চিত্র।
সুরবালা এসেছিল এখানে, বসেছিল ছায়া সুনিবিড় গাছের নিচে একটি বেঞ্চে।
মাহফুজ এলো, ঘন্টা খানেক পরে।
রিক্সা থেকে নেমে মাহফুজ বললো, সুরবালা, তোমার কাছে খুচরা টাকা আছে? বিশ টাকা দাও তো।
সুরবালা ভেনিটি ব্যগ থেকে বিশটাকা বের করে দিয়ে বললো, আসতে দেরি হলো কেন?
টিউশনি করে এসেছি। তাই দেরি হয়েছে। তোমাকে বসিয়ে রাখার জন্য স্যরি।
আজ একটু আগে আসলে কি হতো? আমি কত কষ্ট করে বাসায় ম্যানেজ করে এসেছি।
আমি খুব দুঃখিত।
এভাবে আর কতদিন চলবে? বলো মাহফুজ । এভাবে কি জীবন চলে? এভাবে আর কতদিন লুকিয়ে লুকিয়ে তোমার সাথে দেখা করতে হবে?
আর কয়েকটা দিন সবুর কর। গত ইন্টারভিউ টা ভালো হয়েছে। এ চাকরি টা বোধ হয় হয়েই যাবে।
আমি আর পারছি না মাহফুজ । যা করার তাড়াতাড়ি করো। না হলে আমাকে তোমার হারাতে হবে। এই আমি বলে দিলাম।
তুমি কি আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবে না আর কয়েকটি দিন।
আমি তোমার জন্য সারা জীবন অপেক্ষা করতে পারবো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। বাবার ব্যবসায়ী বন্ধুর ছেলে লন্ডন থেকে এসেছে। আমাকে দেখে ওরা পছন্দ করেছে।
তোমার ওদের কে কেমন লেগেছে?
বাবা ফোন দিচ্ছে। আমাকে এক্ষুনি বাসায় যেতে হবে।
আর একটু থাকো না। কিছু ই তো বলা হলো না তোমাকে।
মাকে বান্ধবীর বাসায় যাবার কথা বলে এসেছি তিন ঘন্টা আগে । তোমার জন্য অপেক্ষা করে কেটেছে দু’ঘন্টা। বাবা বাসায় ফেরার সময় হয়ে গেছে। আর থাকতে পারছি না।
যা হবার হবে। তুমি আমার পাশে এভাবেই বসে থাকবে। আমার কাধে মাথা রেখে তোমার মনের কথা বলবে। এভাবেই কেটে যাক তোমার আমার বেলা।
মিষ্টি হেসে সুরবালা বললো, যদি কোনদিন তোমার জীবন থেকে আমি হারিয়ে যাই। কি করবে?
হয়তো মরে যাবো, নয়তো পাগল হয়ে যাবো। এ শোক আমি সইতে পারবো না।
সুরবালা তার ব্যগ থেকে একটা প্লাস্টিকের বাক্স বের করে সুবোধের হাতে দিল।
এটা কি?
বুটের হালুয়া আর লুচি। তোমার ফেভারিট।
আমাকে খাইয়ে দাও।
সুরবালা হালুয়া আর লুচি মাহফুজকে খাইয়ে দিলো।
আবারও সুরবালার ফোন বেজে উঠলো।
এবার সুরবালা একটা রিকশায় চড়ে বললো, আমি যাচ্ছি। তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার বাবার সাথে দেখা করো।
আবার কবে আসবে?
জানিনা।
কবে দেখা হবে?
জানিনা। ভালো থেকো।
সুরবালা চলে গেল।
তার একমাস পর মাহফুজের ভালো বেতনের একটা চাকরি হলো। এখন অফিস কোয়ার্টারে সে থাকে।
সুরবালার ফোন টা বন্ধ। মাহফুজ তাদের বাসায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো তারা এ বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেছে।
এভাবেই সুকন্যা হারিয়ে গেলো মাহফুজের জীবন থেকে।
সুরবালার অভাব তার জীবন টাকে মরুভূমি করে দিয়েছে।
আজ সুরবালাকে হারানোর পাঁচ বছর পূর্ণ হলো। র্দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে পথে, প্রান্তরে, সোশ্যাল মিডিয়ায় , অনলাইনে সবখানে তাকে তন্নতন্ন করে খুঁজেছে সুবোধ। কোথাও পায়নি তাকে। সুরবালা এভাবে তার জীবন থেকে হারিয়ে যাবে তা কল্পনা ও করতে পারেনি মাহফুজ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।