সময়কন্ঠ প্রতিবেদক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে মো. জাফর খান (২৩) নামে এক যুবককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। গত ২৪ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তার করে নিউমার্কেট থানা পুলিশ।
এরপর তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার টিকাসার গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা শাহ আলম খান ও রাশিদা বেগম দম্পতির সন্তান হলেন মো. জাফর খান। রাজধানীর নিউমার্কেট থানার ৪৩ নম্বর নিউ এলিফ্যান্ট রোডে থাকতেন তিনি। ওই বাসা থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিউমার্কেট থানা পুলিশের দাবি, জাফর ১৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ৯ দফা দাবি নিয়ে নিউমার্কেট থানার সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। তবে শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলন প্রতিহত করতে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলাসহ ককটেল বিস্ফোরণ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন জাফরসহ অন্য আসামিরা। এছাড়া ঘটনাস্থলে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে মহড়া করতে থাকেন তারা।
বাবা শাহ আলম খান ও রাশিদা বেগম বলেন, আমার ছেলে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষেই ছিল তার অবস্থান, যা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলো দেখেই স্পষ্ট। সাবেক এমপি ফেরদৌসের সঙ্গে ছবি থাকার কারণে দু’মাস আগের জ্বালাও-পোড়াও এবং ছাত্রদের ওপর হামলার একটি পেন্ডিং মামলায় জাফরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জাফর টিকটকার-ইউটিউবার হিসেবে পরিচিত, দেশের প্রায় সব সেলিব্রিটির সঙ্গে তার ছবি রয়েছে, শুধুমাত্র ফেরদৌসের সঙ্গে ছবি থাকায় জাফরকে আসামি করা হয়েছে।
এ দম্পতি আরো জানান, জাফর তার মামাত বোনের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করেন। সেই সুবাদে ভগ্নিপতি নাজমুল করিম তুহিনকে বিভিন্ন সময় নানা কাজে সহায়তা করেন তিনি। তবে ভগ্নিপতির সঙ্গে তার ছোট ভাই এহসানুল করিম ঈসানের সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। ঈসান নিউমার্কেট থানা আওয়ামী যুব লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। যুবলীগের রাজনীতি করায় থানার ওপর আগে থেকেই তার প্রভাব ছিল। রাজনীতির পটপরিবর্তনের পরেও সেই পরিচিতি কাজে লাগিয়ে ভাই নাজমুল করিম তুহিনের সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য ও হেয় প্রতিপন্ন করতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে জাফরের বিরুদ্ধে ওই মামলা করা হয়েছে। নিউমার্কেট থানায় দীর্ঘদিন কর্মরত এসআই রায়হানের মাধ্যমে এই মামলা দায়ের করা হয়।
তারা বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সুশাসনের ধারা বইছে। যেখানে সরকারের পক্ষ থেকেও যাচাই-বাছাই ছাড়া গ্রেপ্তার না করতে বলা হয়েছে, সেখানে আমার নির্দোষ ছেলে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছে। আমরা এর তদন্তপূর্বক সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয়ে নিউমার্কেট থানার ওসি মোহসীন উদ্দিন একটি জাতীয় দৈনিককে জানান, যাচাই-বাছাই ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তারের সুযোগ নেই। যখনই কাউকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হয়, সেক্ষেত্রে অন্তত তার ছবি মিলিয়ে নেয়া হয়। এছাড়া গ্রেপ্তার জাফরের বিরুদ্ধে থানায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়া ছিল। যদিও বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। নির্দোষ হলে অবশ্যই অভিযোগপত্র থেকে তাকে বাদ দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, মামলা হওয়ার অর্থ যত্রতত্র গ্রেপ্তার নয় উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ৩ সেপ্টেম্বর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। গণঅভ্যুত্থান দমন করতে পতিত সরকার নিষ্ঠুর বল প্রয়োগ করলে বহু প্রাণহানি ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশে বহু মানুষ অপহরণ, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার এসব নিপীড়নের বিচার করতে বদ্ধপরিকর। তবে সরকার সবাইকে আশ্বস্ত করতে চায়, মামলা হওয়ার অর্থ যত্রতত্র গ্রেপ্তার নয়। এসব মামলার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।