সকল মেনু

তরমুজে কৃষক লাভবান তবে ক্রেতার নাভিশ্বাস

রাকিবুল ইসলাম রাজন
বরগুনা প্রতিনিধি

উপকূলীয় মাটি ও আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় ক্রমশই তরমুজ চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফার আশার উপকূলের কৃষকরা ব্যাপকভাবে ঝুঁকছেন তরমুজ চাষে। একই সাথে তরুণ উদ্যোক্তারাও আশার আলো খুঁজে পেয়েছেন তরমুজ চাষে। তবে গেল বছর অতিবৃষ্টি, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তরমুজ চাষে লোকসান গুনতে হয়েছিল বরগুনার চাষিদের। তাই এ বছর আবাদ নেমে এসেছে অর্ধেকে। তবে এবার দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ গুণ। কম জমিতে ফলনও ভালো হয়েছে। এতে কৃষক লাভবান হলেও তরমুজ ছোঁয়ার সাধ্য থাকলেও খাওয়ার সাধ্য নেই ক্রেতাদের।

বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর বরগুনায় তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৮৩৮ হেক্টর। কিন্তু আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ১৭৭ হেক্টর, যা থেকে ফলন হতে পারে ৩ লাখ ৬৮ হাজার টন। গত বছর জেলায় আবাদ ছিল ১৫ হাজার ৮৩৮ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় এ বছর বরগুনা জেলায় তরমুজের আবাদ কম হয়েছে ৪৯ ভাগ। চলতি বছর তালতলী উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের গাবতলীর চরপাড়া গ্রামে ১২০ একর জমিতে আগাম তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক। এরই মধ্যেই উৎপাদিত তরমুজ চলে গেছে রাজশাহী, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলায়।

স্থানীয় চাষি মজিদ বলেন, গত বছর তরমুজ চাষ করে লোকসান গুনতে হয়েছে। স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। এ বছর আগাম চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছি। তিনি আরও বলেন, গত বছর এক একর জমির তরমুজ বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়। এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায়। দাম বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ।

সদর উপজেলার মানিকখালী গ্রামের নজরুল বলেন, তরমুজ আবাদ করে গত বছর লোকসান গুনলেও এ বছর দেখছেন লাভের মুখ। ৪ একর জমি চাষাবাদে খরচ হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত বিক্রি করেছেন সাড়ে ১০ লাখ টাকা।

কৃষি অফিস থেকে মোগো কোনও সহযোগিতা করে না,প্রশিক্ষণ দেয় না। তবে জমিতে এবার ফলন ভালো তয় মোগো জমি নগদ টাকা চাষ করতে দিছি। যদি মোরা তরমুজ চাষে অভিজ্ঞ থাকতাম তাইলে মোগো টাহা মোগো কাছেই থাকতে। মনে ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন গাবতলী গ্রামের চরপাড়া এলাকার জমির মালিক আলী আহম্মেদ খান।

তবে লোকসানের ভয়ে এ বছর তরমুজ আবাদ করেননি পৌর শহরের আমতলা সড়কের ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ। গত বছর তিনি ১৮ লাখ টাকা ব্যয় করে ১৭ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। অতিবৃষ্টির কারণে সব তরমুজ ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে গেছে। বিক্রি করে মাত্র এক লাখ টাকা পেয়েছিলেন। এ কারণে এ বছর তরমুজ চাষ করেননি তিনি।

এদিকে বাজারে তরমুজের দামে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। মাঝারি সাইজের একটি তরমুজ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা এবং বড় সাইজের একটি তরমুজ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য তরমুজ কেনা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। আল আমীন নামে এক ক্রেতা বলেন, রোজার সময় তরমুজের বেশ চাহিদা তবে এবার তরমুজের যে দাম তাতে কিনে খাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। দাম কমলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাবো।

জেলা শহরের তরমুজ বিক্রেতা রফিক বলেন, প্রতি পিস ৩৫০ টাকা করে একশ তরমুজ কিনেছি। এর মধ্যে ৩০টি তরমুজ ৫০০ করে আর বাকিগুলো কেনা দামে বিক্রি করতে হবে। এদিকে বড় তরমুজ ৫০০ টাকায় বিক্রি করলেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হচ্ছে। এভাবে চললে ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। শহরের আড়তদার হারুন অর রশিদ বলেন, এ বছর বাজারে তরমুজ কম। আর যা আছে, তাও চলে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। কৃষকদের কাছ থেকেও কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। কাজেই কম দামে তরমুজ বিক্রি করার সুযোগ নেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, রমজানের কারণে এ বছর তরমুজের ভালো দাম পেয়েছেন কৃষক। কিছুদিন পর হয়তো কিছুটা কমতে পারে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম বলেন, তরমুজের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top