সকল মেনু

দুই লাখ টাকার বিনিময়ে পাঁচ ঘণ্টা পর ডিবি পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেল মুদি দোকানি

সোহেলুর রহমান, ভৈরব( কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি:

নিজ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান থেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নেয়ার পাঁচ ঘণ্টা পর দুই লাখ টাকার বিনিময়ে রাত দশটায় ডিবি পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পায় আমির হোসেন নামে এক মুদি দোকানদার।

৭ এপ্রিল, রবিবার কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মানিকদী নতুন বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী আমির হোসেন উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী নয়াহাটি গ্রামের মৃত আঙ্গুর মিয়ার পুত্র।
অভিযুক্ত ডিবি পুলিশের এসআই দেলোয়ার হোসেন ও এসআই ইসমাইল কিশোরগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবির সদস্য বলে জানা গেছে।

এ অভিযোগ অস্বীকার করেন কিশোরগঞ্জ ডিবি পুলিশের এসআই দেলোয়ার হোসেন।
তবে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী ঘটনার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান।

ভুক্তভোগী মুদি দোকানদার আমির হোসেন অভিযোগ করেন, ৭ এপ্রিল রবিবার বিকেল আনুমানিক ৫টায় মানিকদী নতুন বাজারে নিজ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে ছয় সাত জনের ডিবি পুলিশের একটি টিম সিভিলে উপস্থিত হয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ইজিবাইকে তুলে কিছুদূর গিয়ে সাদা রঙের একটি হায়েস মাইক্রোবাসে তুলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে তাকে নিয়ে যায় কুলিয়ারচর দাড়িয়াকান্দি স্টিল ব্রিজ এলাকায়। সেখানে গাড়ির ভিতরে তাকে মারধর করে ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে মামলা দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এ সময় কিশোরগঞ্জ ডিবি পুলিশের এসআই দেলোয়ার হোসেন (৪৮) ও এসআই ইসমাইল (৪৫) সহ আরো ৫জন ছিলেন বলে ভুক্তভোগী আমির হোসেন ও প্রত্যক্ষদর্শী জামাল মিয়া।
ঘটনার দিন বিকেল ৫টায় নিজ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান থেকে অস্ত্রের মুখে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় এবং রাত ১০টায় দাবীকৃত টাকা পাওয়ার পর আমির হোসেনকে ছেড়ে দেয় ডিবি।

এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নিতে ৮ এপ্রিল সোমবার দুপুরে আইজিপি কমপ্লেইন সেলে লিখিত অভিযোগ পাঠায় ভুক্তভোগী মুদি দোকানদার আমির হোসেন।

ওই অভিযোগের অনুলিপি দেয়া হয়েছে ডিআইজি ঢাকা রেঞ্জ, কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম এন্ড অবস্, ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ, কুলিয়ারচর অফিসার ইনচার্জ, ভৈরব প্রেসক্লাব ও ভৈরব রিপোটার্স ক্লাব ও ইউনিটিকে।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, এসআই দেলোয়ার হোসেন ও এসআই ইসমাইল ৫/৬জন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে পেশাদারিত্বের প্রভাব খাটাইয়া অহেতুক মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ তুলে রবিবার বিকেলে ভুক্তভোগীর মুদি দোকানে এসে তাদের সাথে যেতে বলেন। তাদের কথা মতো যেতে অপরাগতা প্রকাশ করলে অস্ত্র ঠেকাইয়া জোরপূর্বক সাদা রঙের মাইক্রোবাসে উঠাইয়া দাড়িয়াকান্দি স্টিল ব্রিজের কাছে নিয়ে এসে প্রাণ নাশের হুমকি দেন। এসময় মুক্তিপণ বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করেন। দাবীকৃত টাকা না পেলে ১ হাজার ইয়াবা দিয়ে মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দেয়া হয়। এ সময় এসআই দেলোয়ার হোসেন তার ব্যবহৃত ০১৭১২-২৮০৪১২ নাম্বার থেকে আমির হোসেনের আত্মীয় জামাল মিয়াকে ফোন করে টাকা নিয়ে কুলিয়ারচর দাড়িয়াকান্দি আসতে বলে। এত টাকা দেয়ার ক্ষমতা নেয় বলে সবশেষ ২লাখ টাকা দেয়ার কথা হয় ডিবির এসআই দেলোয়ারের সাথে। আটকের পাঁচ ঘণ্টা পর আত্মীয় জামাল মিয়া ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা নিয়ে দাড়িয়াকান্দি স্টিল ব্রিজের কাছে এসে এসআই দেলোয়ারের হাতে দেয়ার পর ভুক্তভোগী আমির হোসেনকে ছেড়ে দেয় ডিবি পুলিশ।
ডিবির এসআই দেলোয়ারকে নিজ হাতে ওই টাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জামাল মিয়া।

অভিযুক্তদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ ডিবি পুলিশের এসআই দেলোয়ার হোসেন মুঠোফোনে ঘটনাটি অস্বীকার করেছেন। এমন ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ ডিবি পুলিশের ওসি আজিজ আহমেদ বলেন, আমি মাত্র শুনলাম বিষয়টা। যেহেতু আপনি আমাকে জানিয়েছেন বিষয়টি দেখবো।

কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী এ হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে উক্ত
বিষয়টি জানতে চান। তিনি এ সময় বলেন ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। মাদকের সাথে যদি কেউ জড়িত থাকে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। আমার লোকজনও যদি জড়িত থাকে টাকার মাধ্যমে ছেড়ে দিয়ে আসে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন পুলিশ সুপার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top