১৮ মাস ধরে সৌদি আরবের ক্লাব আল-হিলালে আছেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার জুনিয়র। কিন্তু এই সময়ের ভেতর তিনি খেলেছেন মাত্র সাতটি ম্যাচ। কারণ ইনজুরিতে তাকে বেশিরভাগ সময়ই মাঠের বাইরে কাটাতে হয়েছে। ফলে সৌদি লিগে আলোড়ন তোলা নেইমারের দলবদল রূপ নিয়েছে চরম হতাশায়। ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর আর জাতীয় দলেও তিনি খেলতে পারেননি। ফলে তার ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ কি সেই আলোচনা উঠেছে।
কতটা সময় আর পেশাদার ফুটবল খেলবেন, তার একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন নেইমার নিজেও। ২০২৬ বিশ্বকাপ দিয়েই তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ারে ইতি টানবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। ফুটবলের পরবর্তী বৈশ্বিক আসর বসবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে। সেখানে খেলা ও জাতীয় দলের স্কোয়াডে থাকতে যা করা লাগে, তার সবই করবেন বলে জানান এই আল-হিলালের সেলেসাও ফরোয়ার্ড।
বর্তমানে নেইমারের বয়স ৩২, বিশ্বকাপ চলাকালে যা ৩৪ বছরে দাঁড়াবে। ফলে ২০২৬ আসরই হতে পারে তার শেষ বিশ্বকাপ। সিএনএন স্পোর্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেইমার নিজেও সেটাকেই ক্যারিয়ারের শেষসীমা বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘আমি চেষ্টা করব সেখানে (২০২৬ বিশ্বকাপ) থাকার। আমি জানি, এটাই আমার শেষ বিশ্বকাপ, শেষ শট। আমার শেষ সুযোগ। সেখানে খেলা এবং জাতীয় দলে থাকার জন্য আমি সব রকম চেষ্টাই করব।’
তার আগে ব্রাজিলকেও বিশ্বকাপে সরাসরি ওঠার সমীকরণটা মেলাতে হবে। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের পর থেকে দারুণ উত্থান-পতন দেখেছে সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। স্থায়ী কোচ দরিভাল জুনিয়রের অধীনেও তারা ম্যাচ জয়কে অভ্যাসে পরিণত করতে পারেনি। ৮ জানুয়ারি তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ব্রাজিল এখন পর্যন্ত ১৪ ম্যাচ খেলেছে, এর মধ্যে ৬টি জয়, ২ হার এবং ৭ ড্র। কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ও ছন্দ ধরে রাখতে না পারায় লাতিন অঞ্চলের ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের টেবিলেও শীর্ষ তিনে নেই ব্রাজিল। তাদের অবস্থান পাঁচ নম্বরে।
লাতিন অঞ্চল থেকে শীর্ষ ছয়টি দল বিশ্বকাপের টিকিট কাটবে। সপ্তম দলটিকে খেলতে হবে প্লে-অফ। ব্রাজিল হয়তো শীর্ষ ছয়ে নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে পারবে, তবে সেটি সর্বোচ্চ বারের চ্যাম্পিয়নদের ক্ষেত্রে ঠিক মানানসই নয়। নেইমারও বর্তমান অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছেন, ‘দলের প্রতি আমার অনেক বিশ্বাস আছে, এখানে বেশ তরুণ এবং প্রতিভাবান ফুটবলাররা আছে। দল হিসেবেও ব্রাজিল এখন তরুণ। এখন হয়তো আমরা কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে নেই, তবে আমরা আবারও বড় কিছু অর্জন করতে পারব। আমাদের হাতে দেড়বছর সময় আছে, সুযোগ আছে বিশ্বকাপে পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় সব করার।’
ব্যক্তিগতভাবে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার গড়ার ইঙ্গিত দিয়েও, খুব বেশি বড় সাফল্য ছোঁয়া হয়নি নেইমারের। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে খেলেছেন তিনটি আসর। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপে তিনি খেলেও ব্রাজিলকে শিরোপা জেতাতে পারেননি। প্রাপ্তি বলতে কেবল একটি কনফেডারেশন্স কাপ ও অলিম্পিক গোল্ড। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ভয়ঙ্কর চোটে পড়েন নেইমার, পরে সেমিতে ৭-১ গোলের ট্রাজেডি নিয়ে শেষ হয় তাদের বিশ্বকাপযাত্রা। ২০১৮ সালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে হেরে কোয়ার্টার এবং ২০২২ সালে কাতারেও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হেরে একই রাউন্ডে তাদের যাত্রা থামে।
ফলে নেইমারের সামনে জাতীয় দল ও ব্যক্তিগত অর্জনটাকে সমৃদ্ধ করার শেষ সুযোগ ২০২৬ বিশ্বকাপ। তার আগে অবশ্যই তাকে ইনজুরি এড়িয়ে চলতে হবে। ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলতে গিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে তিনি এসিএল চোটে পড়েন। এর ১ বছর পর মাঠে ফিরে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই ফের একই অস্বস্তিতে পড়েন এই আল-হিলাল তারকা। গতকাল আল-ইত্তিহাদের বিপক্ষে খেলার কথা থাকলেও, পেটের পীড়ায় ভোগায় তিনি খেলতে পারেননি। ম্যাচটি টাইব্রেকারে হেরে যায় আল-হিলাল। শনিবার তাদের আরেকটি ম্যাচ রয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।