এ এক অবিস্মরণীয় বিপ্লব! অকল্পনীয়! জীবদ্দশায় এমন বিপ্লব দেখবেন—অনেকেই হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি; যা সম্ভব হয়েছে অকুতোভয় জেনজি প্রজন্মের কারণে; বিপ্লবী এবং বিপ্লবসমর্থক জনতার সম্মিলিত প্রয়াসে। আর তার সাক্ষী পুরো দেশ, পুরো বিশ্ব।
স্বভাবতই বিপ্লব পরবর্তী সরকার বা এর পরবর্তী যে কোনো সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশাও অনেক বেশি। সেসব প্রত্যাশা পূরণে সরকারকে অধিক মনোযোগী হতে হবে। প্রজন্মের চাওয়াকে গুরুত্ব দিতে হবে। জনগণের মনের ভাষা বোঝে তাদের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু অগ্রাধিকার চিহ্নিত করা জরুরি। সেইসঙ্গে দ্রুত সেসব বাস্তবায়নের উপায় খুঁজতে হবে। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়নে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। বুঝতে হবে জনপ্রত্যাশা, জনআকাঙ্ক্ষা।
যে গড্ডালিকা প্রবাহে বছরের পর বছর গা ভাসিয়ে দিয়েছিল পূর্ববর্তী সরকারগুলো; তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এখনই। জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতির ট্রেনকে জনগণের লাইনে, জনপ্রত্যাশার প্ল্যাটফর্মে তুলে আনতে হবে।
মোটা দাগে চারটি সমস্যার সমাধান করতে পারলে অন্য সব সমস্যা ধীরে ধীরে কেটে যাবে। বলা চলে, সব সমস্যার সমাধান ওই চার পয়েন্টে। পয়েন্টগুলো হলো—
১. জনশৃঙ্খলা
২. কর্মসংস্থান
৩. শিল্পায়ন
৪. ব্যাপক উৎপাদন।
জনশৃঙ্খলা: মানুষের মনে এখনও ভীতি কাটেনি। জনশৃঙ্খলা বা আইনের ক্ষেত্রে এখনও কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি। পুলিশ এখনও তার পূর্ণ গতিতে কাজ করতে পারছে না। সরকার অনেক ক্ষেত্রে কঠোর হতে পারছে না। ফলে নানা ধরনের অশুভ চক্র তাদের অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। যতটা কঠোর হস্তে এসব অপতৎপরতা দমন করা দরকার—একটি অনভিজ্ঞ এবং নতুন সরকারের পক্ষে তা যে কোনো কারণেই হোক সম্ভব হচ্ছে না। অথচ যেভাবেই হোক এটা সম্ভব করতে হবে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি চলছেই। সন্ত্রাসীরা ধরা পড়ছে না, বরং কারাগার থেকে ছাড়া পাচ্ছে। অপরাধীরা কেউ কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছে, আবার কেউ কেউ আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ছে।
কালবিলম্ব না করে জনমনে স্বস্তি ফেরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের ধরতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। জনভীতি দূর করা এখন সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। মানুষের মনে স্বস্তি না এলে সরকার নিয়ে তাদের উষ্মা বাড়বে। যেটি ভবিষ্যতে অন্যরূপ পরিগ্রহ করতে পাারে। নিজেদের বিপ্লবের সরকার বা জনগণের সরকার প্রমাণ করতে হয়তো সরকার কঠোর হচ্ছে না এক্ষেত্রে, কিন্তু সরকারের এ উদারতার সুযোগ নিয়ে দেশি-বিদেশি চক্র নিতে পারে নানা সুযোগ; যা ভবিষ্যতে বড় ভুল হয়ে ধরা পড়বে, তখন আর কিছুই করার থাকবে না। অপেক্ষা করতে হবে অমোঘ পরিণতির জন্য। কর্মসংস্থান: মানুষের কাজ থাকলে, সে নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকবে। পরনিন্দা, পরচর্চা বা সমালোচনার সুযোগ কম পাবে। কাজ থাকলে পকেটে টাকা থাকবে। টাকা থাকলে পেটে ভাত থাকবে। পেট শান্তি তো দুনিয়া শান্তি! আর পেটে খাবার নেই মানে সে দুনিয়া খেয়ে ফেলতে চাইবে, তার কাছে ভালো-মন্দের বিচার মূল্যহীন।
বাস্তবতা হলো—বাংলাদেশে বিপুল জনসংখ্যা অথচ তাদের একটি বড় অংশ বেকার। যারা কাজ করছেন তারাও কাঙ্ক্ষিত কাজ পাচ্ছে না। পেটের দায়ের যোগ্যতার চেয়েও নিম্নমানের কাজ বা অড জব করছেন। যে কারণে কোথাও অর্থবহ কিছু না ঘটলেও অকারণে শত বা হাজারো লোকের সমাগম হয়; যা বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না। নেই কাজ তো খই ভাজ অবস্থা। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের আড্ডাস্থল। আর তাই ভালো মানুষের পরিবর্তে অভালো মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। সে অবস্থায় যাতে পতিত না হতে হয়, সেজন্য বেকার সমস্যা সমাধানে ব্যাপক কর্মসংস্থানের বিকল্প নেই। কর্মসংস্থান করতে পারলে যেমন সবদিক থেকে শান্তি আসবে, তেমনি সরকারও জনপ্রিয় হয়ে ওঠবে। এমন অনেক উদাহরণ আছে—যেসব জনপ্রতিনিধি নিজ এলাকার বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন; সেই জনপ্রিতিনিধি কখনও নির্বাচনে পরাজিত হননি। একটি চাকরি দিয়ে একটি পরিবার, একটি গোষ্ঠী, একটি পাড়া এবং ক্ষেত্রবিশেষে একটি গ্রামকে খুশি করা যায়। কথা হলো—রাতারাতি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে না ঠিক। সেজন্য কিছু পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। দুঃখের বিষয় হলো—এ উদ্যোগটাই কোনো সরকার নেয়নি, এমনকি তারা এটা উপলব্ধির আন্তরিক চেষ্টাও করেনি।
কর্মসংস্থানের একটি আপাত সমাধান আছে। সেটি হলো সরকারি-আধা সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে। প্রয়োজনে গতানুগতিক দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করে কাজটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করতে হবে। দ্বিতীয় পথ হচ্ছে বিদেশে ব্যাপকহারে বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। এক্ষেত্রে বিশাল একটি ভূমিকা রাখতে পারে বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ২০২৩ সালে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে প্রবাসীদের মাধ্যমে। এই বৈদেশিক আয় দ্বিগুণ, তিনগুণ এমনকি পাঁচগুণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এই বিরাট জনসংখ্যা অভিশাপ নয়, এটি আশীর্বাদ, সেটা প্রমাণ করতে হবে। কাজটা মোটেও কঠিন নয়। মুদ্দা কথা জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। শুধু মুখে মুখে নয়, প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।
সেক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগী হয়ে দ্রুত কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দূতাবাস বা কনস্যুলার অফিসগুলোর মাধ্যমে সহজেই এ কাজটি করা যায়। এক্ষেত্রে শুধু সরকারের সদিচ্ছা এবং আন্তরিক উদ্যোগ দরকার।
বিদেশে ব্যাপক হারে দক্ষ, আধা দক্ষ এবং অদক্ষ বা কৃষি শ্রমিকদের পাঠাতে হবে। সম্প্রতি সারাবিশ্বে কৃষি শ্রমিকদের চাহিদা বাড়ছে। এছাড়া ফুড ইন্ডাস্ট্রিসহ সব ধরনের কারখানায় কাজের সুযোগ বেড়েছে। আগে যেসব দেশ নিজেরা উৎপাদন না করে আমদানিনির্ভর ছিল, ভবিষ্যতের খাদ্য ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রীর নিরাপত্তার কথা ভেবে এখন তারাও নিজস্ব উৎপাদনে জোর দিয়েছে। কিন্তু তাদের হাতে প্রয়োজনীয় দক্ষ বা অদক্ষ শ্রমিক নেই। অনেক দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি না পেয়ে ক্রমাগত কমছে। যেসব দেশ নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই অন্য দেশ থেকে শ্রমিক নিচ্ছে। মনে রাখতে হবে, আমাদের শ্রমশক্তি ব্যবহার করে তারাও যেমন লাভবান হবে, আমরাও হবো। যাকে বলে উইন উইন সিচুয়েশন। বিদেশিদের বিষয়টি বোঝাতে পারলে তা তার চাহিদার ফর্দটা হাত করতে পারলেই বাজিমাত।
তবে ডাক্তার, নার্স, হেলথকেয়ার সার্ভিস, প্রকৌশলী, আইটি এক্সপার্টসহ দক্ষ পেশাজীবীদের চাহিদা যতই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে। বাস্তবতা হলো দক্ষদের চাহিদা রয়েছে বিশ্বের সর্বত্রই। এছাড়া হোটেল-রেস্টুরেন্ট, সুপার শপ, হিসাব রক্ষণ, ড্রাইভার, নির্মাণ শ্রমিক, প্লাম্বিং—এ ধরনের শ্রমিকদের চাহিদাও কম নয়। অদক্ষ শ্রমিকদেরও একটি বিরাট বাজার আছে। কৃষি শ্রমিকদের অদক্ষ ক্যাটেগরিতে ফেলে তাদের সিজনাল ভিসা দিচ্ছে অনেক দেশই। সিজনাল থেকে নিয়মিত হওয়ার সুযোগও রয়েছে।
এখানে একটি আইডিয়া না বললেই নয়। মাত্র ৬ মাসের একটি ডিপ্লোমা বা বিশেষ কোর্সের ব্যবস্থা করে হেলথকেয়ার সার্ভিস পারসন তৈরি করা যায়। আগামী ৫ বছরে শুধু ইউরোপেই ২০ লাখ হেলথকেয়ার সার্ভিস পারসন লাগবে। সেটা আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ উন্নত দেশের সবগুলো হিসাব করলে এই সংখ্যা ৫০ লাখে পৌঁছবে। বাংলাদেশের সামনে সুযোগ আছে এই সেক্টরকে নিজেদের দখলে নেয়ার। বিশেষ করে কৃষি এবং আইটি—এই দুটি বিষয়ে স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে কাজের সুযোগ রয়েছে ব্যাপক। এছাড়া হিসাররক্ষণ বা বিভিন্ন ট্রেডে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে।
হয়রানি বন্ধ করে, বিদেশে যাওয়ার ফি কমিয়ে শ্রমিকদের বাইরে পাঠানো গেলে সেটা নানা দিক থেকে বাংলাদেশের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবে। একে তো তারা চাকরি পাচ্ছে, আবার বিদেশ থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাবে; যা আখেরে দেশের অর্থনীতিকে শক্ত করবে।
বাংলাদেশ থেকে যারা বাইরে কাজ করতে গিয়েছেন তাদের প্রায় ৪০ ভাগই সৌদি আরবে। সেখানে সুযোগ রয়েছে আরও শ্রমিক পাঠানোর। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও কর্মসংস্থানের আরও সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য অপ্রচলিত বা কম প্রচলিত কিছু শ্রম বাজার রয়েছে—সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শ্রমিকদের ব্যাপক সংকট রয়েছে। সরকারের উচিত সেই সুযোগগুলো কাজে লাগানোর ওপর বিশেষ নজর দেয়া। নিজেদের কাজ নিজেদের খুঁজতে হবে। যদিও আমাদের দেশের কর্মকর্তারা বসে থাকেন কখন কোন দেশ অনুরোধ করবে তোমরা লোক পাঠাও, তারপর পাঠাবে। সব বাজারই এখন প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে, কোনো কিছুই মুফতে মেলে না। সুতরাং নিজেরা উদ্যোগী হয়ে কাজটা করতে পারলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কাজটা যে খুব কঠিন তা কিন্ত নয়; দূতাবাসগুলোয় প্রয়োজনে শুধু কাজ খোঁজার জন্য একজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। যার কাজই হবে সংশ্লিষ্ট দেশের সব পর্যায়ে যোগাযোগ করে বাংলাদেশিদের জন্য কাজের সুযোগ খুঁজে বের করা। বিশ্বের যেখানেই যান না কেন, চায়না আর ইন্ডিয়ানদের পাবেনই। পাশাপাশি সবখানেই বাংলাদেশিদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারলেই বিশাল কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে।
শিল্পায়ন: কর্মসংস্থানের সঙ্গে শিল্পায়ন জড়িত। শিল্পায়ন হলে আর সবকিছু এমনিতেই হয়ে যায়। ধরুন, একটা নিচু বিলের মতো এলাকায় বড় একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেখানে ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। শ্রমিকদের যাতায়াতের ভালো রাস্তাও নেই। ধীরে ধীরে সেখানে রাস্তা হয়ে যায়। বিদ্যুৎ সংযোগ মেলে। কিছু কাঁচা বাজার বসে, দোকানপাট বসে। একসময় বাজার হয়ে যায়। সময়ের প্রয়োজনে, চাহিদার বিপরীতে সেখানে গড়ে ওঠে বহুতল বিপণিবিতান। এভাবে সেখানে একটি ছোট শহর হয়ে যায়। এরপর আশপাশে আরও কিছু কারখানা হয়। একপর্যায়ে সেটা মাঝারি বা বড় শহর হয়ে ওঠে। ঢাকার অদূরে গাজীপুরেই এরকম অসংখ্য নজির আছে।
শিল্পপ্রতিষ্ঠান মানেই তার সঙ্গে শ্রম বা শ্রমিক যুক্ত। আর তাই এ মুহূর্তে দেশে ব্যাপক শিল্পায়ন জরুরি। তার জন্য বিশেষ ঘোষণা দিয়ে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় বাংলাদেশ ব্যাংক বা দাতা সংস্থার মাধ্যমে অর্থের জোগান দিতে হবে। সেই অর্থ যাবে কেবল শিল্প উদ্যোগে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। দেশের ব্যবসায়ী এবং শিল্পোদ্যোক্তারা ভোগেছেন পুঁজি সংকটে। স্বাধীনতার পর গত দুই বছরে সবচেয়ে বেশি কষ্টে ছিলেন ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তারা। সেই কষ্ট অবশ্য এখনও কাটেনি। যে কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প উদ্যোগ এবং উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম। অনেকেই বেতন দিতে পারছেন না শ্রমিকদের। দ্রুত উদ্যোগী হয়ে শিল্পায়নে ব্যাপক অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে, উদ্যোক্তাদের জন্য নানা সুবিধা ঘোষণা করতে হবে। সহজ শর্তে শিল্প এবং ব্যবসায়ী উদ্যোগে ঋণ দিতে হবে। তাহলে উৎপাদন বাড়বে, রপ্তানি বাড়বে, স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি সুফল পেতে প্রতিটি উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে অন্তত একটি করে শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে হবে। সেটি আপাতত সম্ভব না হলেও অন্তত একটি করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। যেখানে হাজার পাঁচেক লোকের কাজের সুযোগ তৈরি হবে। তাহলে মানুষ কাজ পাবে, অভাব যাবে, সরকার জনপ্রিয় হবে। বিপ্লব সার্থক হবে। পূরণ হবে জনপ্রত্যাশা।
ব্যাপক উৎপাদন (কৃষি): বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্যের জোগান দিতে কৃষিই আমাদের মূল ভরসা। জিডিপির সিংহভাগ আসে কৃষি থেকে। কৃষিই আমাদের বেঁচে থাকার মূল প্রেরণা। কৃষিই আমাদের জীবিকা। তাই কৃষিকে অগ্রাহ্য করা যাবে না কোনোভাবেই। প্রয়োজনীয় সবকিছুর জোগান দিয়ে কৃষিকে সচল রাখতে হবে। কৃষিতে ব্যাপক উৎপাদন বাড়াতে হবে। উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নেই। অনাবাদি জমিকে আনতে হবে চাষের আওতায়। এখনও দেশের অনেক জমি পতিত পড়ে থাকে। সেগুলোকে পতিত ফেলে না রেখে চাষাবাদে এক ধরনের বাধ্যবাধকতার মধ্যে আনতে হবে। অপ্রচলিত এবং লাভজনক কৃষি পণ্যের উৎপাদনে মনোযোগ দিতে হবে। শুধু ধান বা সবজি চাষ না করে মাটির গুণাগুণ বোঝে বিভিন্ন ধরনের ফল-ফলাদি বা অর্থকরী ফসল চাষ করা যায়।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়—দ্রব্যমূল্যের জাঁতাকলে পিষ্ট দেশের মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে তাদের ক্ষোভের মূল কারণ এটা। সব পণ্যের ক্ষেত্রেই সিন্ডিকেট প্রথা দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহতাকে একটি স্থায়ী রূপ দিয়ে ফেলেছে। বিগত পতিত সরকার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বরং পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে, ভাঙতেই হবে। এরইমধ্যে সিন্ডিকেট বিষয়ে অতীত সরকারের মতো আপসকামিতার একটি আবহ দেখা যাচ্ছে—অবশ্যই এ আবহ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, সিন্ডিকেট নস্যাৎ করতেই হবে। তার সঙ্গে ব্যাপকহারে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সরবরাহ চেইন ঠিক রাখতে পারলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আর সেটা সম্ভব হলে জনক্ষোভের পরিবর্তে জনস্বস্তির নতুন আবহ তৈরি হবে। ধীরে ধীরে বিপ্লবের ফসল পৌঁছবে ঘরে ঘরে; যা হবে সরকার এবং দেশবাসীর জন্য একটি সুখকর পরিস্থিতি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।