অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের আশ্বাসে হাসপাতালে ফিরেছেন বিক্ষোভরত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ব্যক্তিরা।
সরকারের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার পর বিছানাপত্র নিয়ে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনের সড়কে অবস্থান করার ঘোষণা দেন আহতরা। এই বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের কারও এক পা নেই, কেউ কেউ হুইলচেয়ারে, আবার কারও চোখে ব্যান্ডেজ দেখা গেছে।
এ অবস্থায় বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান পঙ্গু হাসপাতালের সামনে যান। আহতদের দাবি পূরণের আশ্বাসে সড়ক থেকে হাসপাতালে ফিরতে রাজি হন বিক্ষোভকারীরা।
আহতদের উদ্দেশে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, এখন এখানে আপনাদের কথা শোনার মতো উপযুক্ত সময় নয়। আপনারা বৃহস্পতিবার ২টার সময় সচিবালয়ে আসেন। সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে। সেই রূপরেখা ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু ব্যবস্থা না হওয়ার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আপনাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হবে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের ব্যর্থতা আছে, ভুল আছে। আপনাদের প্রতি আমাদের অনেক অনেক বেশি দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল। আমরা চেষ্টা করেছি, চেষ্টার কোনো ঘাটতি ছিল না, কিন্তু আমরা করতে পারিনি।
তিনি বলেন, আমি প্রধান উপদেষ্টার কাছে গিয়েছি। তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে বলেছিলেন যে সবার চিকিৎসাসহ যা কিছু দরকার, তা উনি করবেন। আমাদের অবশ্যই ঘাটতি ছিল। আপনাদের এভাবে বসে থাকা আমাদের ভালো লাগছে না। এটি আমাদের জন্যও হৃদয়বিদারক ঘটনা।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, একটা ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। বহু সমস্যা দেখা দিয়েছে। আসুন আমরা আলোচনার ভিত্তিতে একটা রূপরেখা তৈরি করি। সেটা ঠিকমতো বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য আপনারা একটা টিম করবেন।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সহকারীর দায়িত্বে আসা ড. মো. সায়েদুর রহমান আহতদের দেশের সেরা চিকিৎসা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, আমরা একটা সুযোগ চাই। আমাদের একটা সুযোগ দিন। কোনো ব্যত্যয় হলে আমরা দায়িত্বে থাকব না।
এ সময় উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, আমরা কথা দিচ্ছি, আপনাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করব। না পারলে তখন যা ইচ্ছা করবেন, কোনো আপত্তি থাকবে না। তবে আপনাদের সুষ্ঠু চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হবে।
এরপর আহতরা হাসপাতালে ফিরতে রাজি হন। তখন উপদেষ্টারা তাদের নিয়ে হাসপাতালে ঢোকেন। রোগীদের হাসপাতালের শয্যায় পৌঁছে দিয়ে পঙ্গু হাসপাতাল ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগীদের দেখে রাত সোয়া ৪টার পর উপদেষ্টারা বাসার উদ্দেশে রওনা করেন।
এর আগে গতকাল বুধবার দুপুর থেকে পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কে তাদের এ অবস্থান শুরু হয়। জানা গেছে, এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম নিটোর পরিদর্শনে যান। তারা চতুর্থ তলার পুরুষ ওয়ার্ডে ঘুরে দেখেন। সেখানে ছিলেন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের একাংশের আহতরা, বাকিরা ছিলেন তৃতীয় তলায়। কিন্তু তৃতীয় তলার ওয়ার্ডে পরিদর্শন না করায় সেখানে থাকা চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে তারা নিচে গিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি গাড়ি আটকে দেন।
ধারণা করা হচ্ছিল গাড়িটি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ব্যবহার করতেন। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ব্রিটিশ হাইকমিশনারের গাড়িতে উঠে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। তবে বিষয়টি বুঝতে পারেননি আহতরা। তারা আগের গাড়িটি ও পুলিশের একটি প্রোটোকল গাড়ি আটকে দেন। আহতরা দুপুর সোয়া ১টার পর থেকেই রাস্তায় অবস্থান নেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।