ছন্দপতন। বেশ ছন্দপতন। কে জানতো, এমন করে পাল্টে যাবে সবকিছ! মাত্র ক’দিনের ব্যবধানেই ঢাকাই ছবির জমজমাট পরিবেশ, রমরমা ব্যবসা। এখন খেটেখাওয়া শ্রমজীবী মানুষ কিংবা কথিত ‘রিকশাওয়ালা’দের মতো আমরাও সিনেমা দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করি। সময়, সুযোগ মিললে ‘ব্যাটে-বলে’ মেলানোর চেষ্টা করি। দলবেঁধে কিংবা মনের মানুষকে নিয়ে। না না ‘বিকল্পধারা’ নয়, বলা হচ্ছে ‘মূলধারা’র কথা। ‘বাংলা সিনেমা’ বলে যাকে আমরা ( নাক সিটকিয়েছি) ‘মশকরা’ করেছি। আবার ঘৃণায়, লজ্জায় অপমানে ছি! ছি! করে বাংলা সিনেমাকে ‘ছিনেমা’ বলেছি। (যদিও বাংলা সিনেমার অবস্থা একেবারে ‘লেজে গোবরে’ মেখে ছিল, মেতে ছিল চরম সীমা লঙ্ঘনের বর্বরতায়)।
এ যেন সিনেমার ভেতর আরেক সিনেমা। আলাদিনের জাদুর প্রদীপের মতো রাতারাতি দৃশ্যপটের বিস্ময়কর পরিবর্তন। তিরস্কার ভুলে গিয়ে দলবেঁধে সেই ‘বাংলা ছিনেমা’র দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। আর চোখ মুখের ইতস্ততার ছাপ কাটানোর জন্য সিনেমাকে আদর করে ‘মুভি’ উপাধি দিচ্ছি। পরিপূর্ণ বিনোদন পেতে ‘পম গানা’কেও দেখতেও ভিড় জমাচ্ছি সিনেমা হলে। শুধু কী তাই! এদিকে মিনি পর্দার দাপুটে কন্যারাও ভিড় করছেন এফডিসিতে। যে সিনেমার কথা শুনলে ‘ঘেন্না’ নিয়ে মুখে ‘টিপ্পনি’ ফুটিয়ে তুলতেন, সেই ‘বস্তা পচা’ সিনেমাতেই শামিল হচ্ছেন। রঙ্গরস ভুলে সেই ‘রস’-এর জোয়ারেই ভাসছেন তারা। স্রোতের মতো ছুটে যাচ্ছেন ‘কমার্শিয়াল সিনেমা’র বাজার দখল করতে।
অবাক বিস্ময়, সেই ‘রিকশাওয়ালা’দের মন জয় করতেই মরিয়া এখন মিনি তারকারা। সালোয়ার-কামিজ থেকে হাফ-প্যান্ট ধরেছেন, শাড়ি খুলে ‘হট-কেক’ হচ্ছেন। কিংবা আইটেম কন্যা হয়ে ‘ললিপপ’ সাজছেন। ছোট পর্দার কাজ ইস্তফা ঘোষণা দিয়ে বড় পর্দাকেই একমাত্র চিন্তা-চেতনা এবং ধ্যান-ধারণার জায়গা বানিয়ে ফেলছেন।
নকল, জোড়াতালি, কিংবা ‘ললিপপ’- সবমিলিয়ে পুরোপুরি জমজমাট বাংলা সিনেমা। এক কথায়, ‘ডিজিটাল সিনেমা’য় ভাসছে বাংলা সিনেমা। তর্ক-বিতর্ক যাই করি না কেন, ডুবে যাওয়া চলচ্চিত্র শিল্পকে তীরে তুলে এনেছে তথাকথিত এই ‘ডিজিটাল সিনেমা’। নিকশ, কালো অন্ধকারের ভেতর সূর্যের হাসি ফুটিয়েছে। ভোরের আলোয় উদ্ভাসিত করেছে চলচ্চিত্র পরিবার। অভিমানীদেরও ফিরিয়ে এনেছে, নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে। আর অবিশ্বাসের দোলা লাগিয়েছে দর্শকের কাছে। দেশের ‘অ্যানালগ’ দর্শকের কাছে রীতিমতো আলাদিনের প্রদীপের মতোই ঠেকেছে। নিখুঁত, ঝকঝকে ছবি আর পরিচ্ছন্ন শব্দে বিমুগ্ধ, বিমোহিত, দর্শক। তারা বিকল্প ধারা দেখেনি (সুযোগ পায়নি, কিংবা দেখে না,) তাদের কাছে রীতিমতো জাদুই বলা চলে।
তবে এ কথাও দৃঢ়তার সঙ্গে বলা যায়, জমজমাট হলেও চলচ্চিত্রের আকাশ থেকে এখানো মেঘ কাটেনি পুরোপুরি। ‘এই মেঘ এই রোদ’ অবস্থা বিরাজ করছে এখনো। ঝাঁকে ঝাঁকে সব চলচ্চিত্রে ছুটলেও লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছেন না বেশিরভাগ। দক্ষতাকে ছাপিয়ে মেধাহীনতাই ফুটে উঠছে ক্রমশ। বাড়ছে অদক্ষ নির্মাণ। বাড়ছে ‘জোড়াতালি’র সংখ্যা। কিন্তু ‘জোড়াতালি’ আর ‘এলেবেলে’ সিনেমা দিয়ে কত বার আর দর্শকের কাছে যাওয়া যায়!
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।