অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সশস্ত্র বাহিনী সব ধরনের সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠান হতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্য সংখ্যা হতে পারে ১৫ জনের মতো। দু-এক জন বেশিও হতে পারে। আজ বিকেলে সেনাসদরে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাপ্রধান এসব কথা বলেন।
ধ্বংস, প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা নয়; ভালোবাসা ও শান্তির সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, তরুণেরা যে স্বপ্ন নিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে মেধা, যোগ্যতা, জ্ঞানভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।
আজ রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে বিএনপি। সেখানে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হয়। দীর্ঘদিন পর দলের সমাবেশে বক্তব্য দিলেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর আপনাদের সামনে কথা বলতে পারার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আমার কারাবন্দী অবস্থায় আপনারা আমার কারামুক্তি ও রোগমুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, দোয়া করেছেন, সেজন্য আমি আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, ‘দীর্ঘ আন্দোলন–সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদী অবৈধ সরকারের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছি। আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই, আমাদের বীর সন্তানদের যারা মরণপণ সংগ্রাম করে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। শতশত শহীদদের জানাই শ্রদ্ধা। এ বিজয় আমাদের সামনে নতুন সম্ভবনা নিয়ে এসেছে।’
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে দেশের পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানেরা ও ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইউনূস সেন্টারের এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ বুধবার বলা হয়েছে, ‘আমি সাহসী ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই, যাঁরা আমাদের দ্বিতীয় বিজয় দিবসকে বাস্তবে রূপ দিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অভিনন্দন জানাই দেশের আপামর জনসাধারণকে, যাঁরা ছাত্রদের এই আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন। আসুন, আমরা আমাদের এ নতুন বিজয়ের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করি। আমাদের কোনো প্রকার ভুলের কারণে আমাদের এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। আমি সবাইকে বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে, সব ধরনের সহিংসা এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি এবং ছাত্র ও দলমত–নির্বিশেষে সবাইকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করছি।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের প্রিয় এই সুন্দর ও বিপুল সম্ভাবনাপূর্ণ দেশটিকে আমাদের নিজেদের ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রক্ষা করা এবং একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এখন আমাদের প্রধান কাজ। একটি নতুন পৃথিবী বিনির্মাণে আমাদের তরুণেরা প্রস্তুত। অকারণ সহিংসতা করে এই সুযোগ আমরা হারাতে পারি না। সহিংসতা আমাদের সবারই শত্রু। অনুগ্রহ করে শত্রু সৃষ্টি করবেন না। সবাই শান্ত থাকুন এবং দেশ পুনর্গঠনে এগিয়ে আসুন।’
দেশবাসীর উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, ‘অনুগ্রহ করে নিজে শান্ত থাকুন এবং আপনার আশপাশের সবাইকে শান্ত থাকতে সহায়তা করুন।’
বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে বলে বুধবার দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন–এর এক খবরে বলা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভ ও অস্থিরতার পর শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যান। পাকিস্তান বলেছে, তারা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা নিশ্চিত যে বাংলাদেশি জনগণের দৃঢ় চেতনা ও ঐক্য তাদের একটি সম্প্রীতিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে। কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভের পর ‘শান্তিপূর্ণ এবং দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার’ আশা করছে পাকিস্তান।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।