সকল মেনু

সড়কে মৃত্যু : হত্যা না দুর্ঘটনা?

সময়কণ্ঠ প্রতিবেদক : চালকদের খামখেয়ালিপনা ও বেপরোয়া গাড়ি চালানোয় সড়কে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনা। এতে মরছে মানুষ। বিচ্ছিন্ন হচ্ছে শরীরের অঙ্গ। বরণ করছে সারা জীবনের পগুত্ব। প্রতিনিয়ত এমন অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটলেও বেপরোয়াভাবে পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানো যেন থামছেই না। সেই সঙ্গে এসব দুর্ঘটনার দায়ও নিতে রাজি নন চালকরা। ফলে পরিবহন যাত্রীদের মাঝে ক্রমেই বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। জনমনে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। সর্বত্রই যাত্রীদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। তবে এসব ঘটনা স্বচক্ষে অনুধাবন করা প্রত্যক্ষদর্শীরা কী বলবেন, হত্যা না দুর্ঘটনা? রাজধানীতে গত দেড় মাসে সড়কে প্রাণ হারানো ঘটনাগুলোর প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম এ বিষয়ে। তারা বলছেন, সড়কে সংগঠিত হওয়া ঘটনায় মৃত্যুগুলো কোনোভাবেই দুর্ঘটনা নয়। এগুলো নিঃসন্দেহে হত্যাকাণ্ড। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চালকের বেপরোয়া গতি ও নেশাগ্রস্থ মানসিকতাকেই দায়ী করছেন তারা। একই দাবি এসব ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজনদের। কিন্তুু চালকরা বলছেন, এসব মৃত্যুর জন্য তারা দায়ী নয়। তাদের দাবি, ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ চায় না- মানুষ মারা যাক। এজন্য তারা যাত্রীদের অসচেতনতাকে দায়ী করছেন। সর্বশেষ গত ১৭ মে রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারে দুই বাসের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় প্রাণ হারান ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকার বিজ্ঞাপন বিভাগের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মো. নাজিম উদ্দিন (৩৮)। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী রাসেল মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, যদিও লোকটি বাস অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে, তাই হয়তো সবাই বলবে এটি একটা দুর্ঘটনা। কিন্তুু আমি স্বচক্ষে দেখেছি এটি একটি ভয়ানক হত্যাকাণ্ড। বাসটির ধাক্কায় যখন লোকটি রাস্তায় পড়ে যায় সেসময় যদি বাসটি থামাতো তাহলে হয়তো তিনি প্রাণে বেঁচে যেতেন। কিন্তুু বাসটি না থামিয়ে উল্টো তার গলার ওপর দিয়ে পেছনের দুটি চাকা তুলে দিল। মুহূর্তেই তার রক্তে ভেসে যায় রাস্তা। তার মতে, যাত্রীদের নিষেধ উপেক্ষা করে একজন চালক আরেকজন চালককে ওভারটেক করতে গিয়ে এমন মৃত্যু কোনোভাবেই দুর্ঘটনা হতে পারেন না। একই দিন অর্থাৎ ১৭ মে রাত ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় বাসের চাপায় পা হারানো কমিউনিটি পুলিশ সদস্য আলাউদ্দিন সুমন (৪০)। ১২ মে সকালে তিনি হানিফ ফ্লাইওভারে দায়িত্ব পালনকালে তারাবো পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দেয়। এতে তার বাম পা থেঁতলে হয়ে যায়। চালকের বেপোরোয়া গতির কারণে এমনটা ঘটেছে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শী কমিউনিটি পুলিশ সদস্য রফিকুল ইসলাম। এর আগে ১৪ মে সকালে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সিএনজি করে সদরঘাট থেকে টঙ্গী যাওয়ার সময় গুলশানের নতুন বাজার এলাকায় বেপোরোয়া গতির কারণে ট্রাকের ধাক্কায় ৭৫ বছর বয়সী নুরজাহান নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয় বলে জানান তার ছেলে শফিউল। এছাড়া গত ১০ মে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া হাট এলাকায় প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চাপা দেয় ১০ বছরের শিশু সুমাইয়া আক্তারকে। ঘটনাস্থলেই মারা যায় শিশুটি। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় দোকানদার জিসান জানান, ওই প্রাইভেটকারের চালক ছিলেন নেশাগ্রস্ত। এভাবে ক্রমেই সড়কে প্রাণ হারানোর ঘটনা দীর্ঘ হচ্ছে। কিন্তুু ঘটনাগুলোকে প্রত্যক্ষদর্শীরা হত্যাকাণ্ড বললেও অদৃশ্য কারণে আইনের কঠোর প্রয়োগ মিলছে না বলে মনে করেন যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল। তিনি বলেন, এসব ঘটনায় প্রতিনিয়ত প্রমাণ হচ্ছে চালকদের স্বেচ্ছাচারিতায় ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। কিন্তুু আইনের কঠোর প্রয়োগ নেই। যাত্রী অধিকার আন্দোলনের দাবি- এসব নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকরা যেন দৃষ্টি দেন। বিশেষজ্ঞরা কোন দৃষ্টিতে দেখছেন এমন ঘটনাগুলোকে সে ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলোজি বিভাগের অধ্যাপক ও অপরাধ বিশ্লেষক হাফিজুর রহমান কার্জনের কাছে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, দুর্ঘটনা সেটি-ই যেটির জন্য কেউ প্রস্তুত থাকে না। কিন্তুু কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় সেটি নিঃসন্দেহে হত্যাকাণ্ড। তাই চালকদের ইচ্ছাকৃত বেপরোয়া গতির কারণে সড়কে মৃত্যু কোনোভাবেই দুর্ঘটনা হতে পারে না। উল্টো এসব হত্যাকাণ্ডকে দুর্ঘটনা বলে আইনের ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে আসা অপরাধীদের অবাধ বিচরণ এ ধরণের অপরাধকে আরও বেশি সংগঠিত করতে উৎসাহ যোগায়। তিনি বলেন, সড়কে দুর্ঘটনার জন্য ৯০ শতাংশই একজন চালক দায়ী। বেপোরোয়া গতি আর অসুস্থ মনোভাব এর মূল কারণ। তাই এসব রোধে যেমন আইনের কঠোর অবস্থান প্রয়োজন তেমনই প্রয়োজন চালকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেয়া। তবে এমন হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top